বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতারণার ৩০ বছর: অবশেষে ধরা ‘বনবন্ধু’

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৫:৫৮

‘বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পরিচয় দিতেন তিনি। মুজিববর্ষে গাছ লাগাবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন। তিনি প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।’

নাম তার জাহিদুর রহমান ইকবাল। নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবাল নামে।

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে নানা ধরনের সেবা দেয়ার কথা বলে টাকা আদায়ের অভিযোগ তিন দশক ধরে। সবশেষ ধরা খেয়েছেন মুজিববর্ষের নামে অর্থ আদায় করতে গিয়ে।

মুজিববর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত ৪০ হাজার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে টাকা চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, এই টাকা দিয়ে বৃক্ষরোপণ করবেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে তাকে আটক করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। আর বুধবার তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

হারুন বলেন, ৩০ বছর ধরে নানা ধরনের প্রতারণা করে আসছেন ‘বনবন্ধু’। সবশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী অবৈধভাবে ব্যবহার করে টাকা আয় করেছেন তিনি।

‘বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পরিচয় দিতেন তিনি। মুজিববর্ষে গাছ লাগাবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন।

‘তিনি প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন’- সংবাদ সম্মেলনে বলেন ডিসি হারুন।

‘বনবন্ধুর’ প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ করা নথিপত্র। এর সবই তিনি প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ

নিজেকে কনসালটেন্ট গ্রুপ লি., এসএমই কনসালটেন্ট লি., ইইএফ কনসালটেন্ট লি. এর নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও দাবি করেন ‘বনবন্ধু’। তবে এসব কোম্পানির কোনো বৈধ কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

ডিসি হারুন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম তিনি তখন বলেন, ‘‘আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক সেটা তো আমি কনসালটেন্সি করে এনে দিয়েছি।" সেটাও নাকি বিনা পয়সায় করে দিয়েছেন।'

কত টাকা আত্মসাৎ

ডিসি হারুন বলেন, ‘তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করব। রিমান্ডে নিলে বোঝা যাবে তিনি কত লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’

মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণের পোস্টারসহ গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন ‘বনবন্ধু’

তারা পাঁচ শ মানুষের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা করছি। তবে রিমান্ডে না নেয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না তিনি কত টাকা হাতিয়েছেন।’

যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিক্রি’

কনসালটেন্ট গ্রুপ লি., এসএমই কনসালটেন্ট লি. ও ইইএফ কনসালটেন্ট লি.-এর ব্যানারে ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্স, কোম্পানি নিবন্ধন, সোসাইটি নিবন্ধন, ট্রাস্ট নিবন্ধন, ফাউন্ডেশন নিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার নথিপত্র তৈরি, ব্যাংক, বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র তৈরি, টিন-ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিংয়ের নামে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

গ্রেপ্তারের সময় ২৭০টি সিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮৪টি ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল, মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত ৫০০টি চিঠি, দুটি সিপিইউ, দুটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, দুটি মনিটর, একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

কী বলছেন ‘বনবন্ধু’

পুলিশ গ্রেপ্তারের পরও জাহিদুর রহমান ইকবাল নানা কাজের কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় আট লাখের মত গাছ লাগাইছি। জাতীয় সংসদের সামনে যে বটগাছ সেটা আমার রোপন করা। এ বছর আমি ৮৫ যায়গায় গাছ লাগাইছি। ফেসবুকে তার ভিডিও দেয়া আছে।’

পুলিশ বাহিনীর ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার পেছনেও নিজের হাত থাকার দাবি করেন জাহিদুর। বলেন, ‘আমি কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছি গত ৩০ বছর ধরে। পুলিশ ভাইদের পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের কনসালটেন্ট ছিলাম আমি। এই প্রজেক্ট কোথায় কীভাবে তৈরি এইগুলা আমি দেখতাম।’

এ বিভাগের আরো খবর