বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৭৪ বছরের দাম্পত্য, ফের মালাবদল

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৩:২৪

৭৪ বছর আগে বৈদ্যনাথের বয়স যখন ১৮ ছিল তখন ১৩ টাকা পণ (যৌতুক) দিয়ে ছয় বছর বয়সী পঞ্চবালাকে বিয়ে করে আনেন। বর্তমানে বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালার পিঁড়ির (প্রজন্ম) সদস্য মোট ৫৪ জন।

বিয়ের পর পঞ্চম পিঁড়ি (প্রজন্ম) ঘরে আসার পর ভেঙে যায় স্বামী-স্ত্রীর পুরোনো দাম্পত্য সম্পর্ক। এরপর একসঙ্গে থাকতে হলে নবায়ন করতে হয় বিয়ে। গোষ্ঠীগত এই বিধান মেনে ফের বিয়ের মালা বদল করলেন ৯২ বছরের বৈদ্যনাথ দেবশর্মা ও ৮০ বছরের পঞ্চবালা দেবশর্মা।

অশীতিপর বর ও কনের দাম্পত্য জীবন নবায়নের সাক্ষী হয়েছেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।

উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম দক্ষিণ মোড়গাঁওয়ে লৌকিক রীতি মেনে ২১ ফেব্রুয়ারি ফের বিয়ে করেন বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালা।

এই বিয়েতে অতিথি আমন্ত্রণে ছাপানো হয়েছিল ৫০০ কার্ড, তবে শেষ পর্যন্ত দর্শনার্থী ছিলেন হাজার মানুষ।

৭৪ বছর আগে বৈদ্যনাথের বয়স যখন ১৮ ছিল তখন ১৩ টাকা পণ (যৌতুক) দিয়ে ছয় বছর বয়সী পঞ্চবালাকে বিয়ে করে আনেন।

বর্তমানে বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালার পিঁড়ির (প্রজন্ম) সদস্য মোট ৫৪ জন, যাদের বেশির ভাগই কৃষিকাজে জড়িত।

তাদের একমাত্র মেয়ে ঝিলকো বালার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। এই পরিবারে পঞ্চম প্রজন্মের শিশুটি জন্ম নিয়েছে প্রায় সাত মাস আগে।

বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালার পরিবারে পঞ্চম প্রজন্মের হিসাবটি এ রকম: তাদের মেয়ে ঝিলকো বালার মেয়ে যমুনা দেবশর্মা, যমুনার ছেলে প্রসেঞ্জিৎ সরকার, প্রসেঞ্জিৎ-এর মেয়ে (নবজাতক) তনুশ্রী সরকার।

আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ আসেন ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে দেখতে। ছবি: নিউজবাংলা

পঞ্জিকা মেনে রোববার রাতে শুভলগ্নে মালাবদল করেন বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালা। সত্যনারায়ণ পূজা, অধিবাস, বরানুগমনসহ হিন্দু রীতির বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতাই ছিল সেখানে। তবে দশকের পর দশক এক ঘরে থাকার কারণে বাদ দেয়া হয় শুভদৃষ্টির বিষয়টি।

বৈদ্যনাথ দেবশর্মা পেশায় একজন কৃষক। ১৯৭২ সাল থেকে টানা ১৪ বছর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যও ছিলেন।

ছয় যুগেরও আগে প্রথমবারের সাদামাটা বিয়ে নিয়ে এখনও আক্ষেপ আছে বৈদ্যনাথের। তবে এবার আগের স্ত্রীকেই নতুন করে ঘরে তুললেও ধুমধাম আয়োজনে তিনি উচ্ছ্বসিত।

বৈদ্যনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আমার বিয়ে হওয়ায় সেই সময় ধুমধাম বা আনন্দ কিছুই ছিল না। এবারের বিয়েতে অনেক আনন্দ হচ্ছে।

‘শেষ সময়ে মেয়ে-নাতি-নাতনিরা আমাদের জন্য যা করেছে তা বলার মতো নয়। আমি পঞ্চবালাকে ছেড়ে কোনো দিন থাকতে পারিনি।’

পঞ্চবালাও খুশি আগের বর ফিরে পেয়ে। তিনি বলেন, ‘যখন আমার বিয়ে হয় সেই সময় আমি খুব ছোট ছিলাম। সেই সময়কার কথা কিছুই বলতে পারি না। তবে এখন নাতি-পুতিরা আবার বিয়ে দিল। আমার খুব ভালো লাগছে।’

বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালার একমাত্র মেয়ে ঝিলকো বলেন, ‘বিয়েতে আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। সবাই এসেছেন। এটা মূলত মঙ্গল ও পরিবারের ভালোর জন্য করেছি।’

বিয়ের আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা বৈদ্যনাথের নাতি ফটিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এক মাস আগে দিদা-দাদুর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করি। আমরা তার নাতি, আবার আমাদেরও নাতি হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে মিলেই তাদের বিয়ের আয়োজন করেছি।’

পাশের কাহারোল উপজেলা থেকে আসা আত্মীয় লিপা রানী দেবশর্মা বলেন, ‘এ ধরনের বিয়ে আমি কখনও দেখি নাই। এখানে এসে খুব আনন্দ করেছি।’

বিয়ের পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা মহাদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এর আগে এমন বিয়ে দিইনি। তবে তারা যে আয়োজন করেছেন তা সত্যিই আনন্দের।’

এ বিভাগের আরো খবর