বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লাঠিপেটায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সরাল পুলিশ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি   
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:৫৪

মোড়ে অবস্থান নেয়াদের সরে যেতে কয়েকবার অনুরোধ করার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে অভিযানে নামে পুলিশ। লাঠিচার্জ ও জলকামানে সংগঠনের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালসহ সাত দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনরত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা।

মোড়ে অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদের সরে যেতে কয়েকবার অনুরোধ করার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে অভিযানে নামে পুলিশ। লাঠিচার্জ ও জলকামানে সংগঠনের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

খুলনা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমরা দুপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের যৌক্তিক দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছি। সন্ধ্যার দিকে অতর্কিতভাবে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে। লাঠিপেটায় আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।’

পুলিশের অভিযানের সময় নেতা-কর্মীদের যে যার মতো করে সরে যেতে দেখা যায়। এ সময় কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশীদ বলেন, ‘দুপুর থেকে তাদের আমরা যথেষ্ট সম্মান করেছি এবং অনুরোধ করেছি চলে যেতে। কিন্তু তারা আমাদের কথা রাখেননি। তাই বাধ্য হয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সন্ধ্যার সময় আমরা অ্যাকশনে গিয়েছি। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।’

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি অভিযান। ছবি: সাইফুল ইসলাম

পুলিশের অভিযানে বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানালেন সংগঠনটির মহাসচিব শফিকুল ইসলম বাবু। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। আহতরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তবে চার-পাঁচজনের খোঁজ আমরা পাচ্ছি না।’

পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও আমরা পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিইনি৷ আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করতে পারি। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাত দফা না মানা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ছাড়বেন না তারা। আন্দোলনাকীদের অবস্থানের ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার সম্পাদক জামিল আহমেদ রাজু দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০ শতাংশ কোটাসহ সাত দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছেড়ে যাব না।’

জিনি জানান, নেতা-কর্মীদের অন্তত তিন দিনের খাবার ব্যবস্থাসহ উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা বিভাগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক ইবনে সায়মন বলেন, ‘জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা বাংলাদেশকে অর্জন করেছে তাদের উত্তরসূরিরা আজ রোদে পুড়ছি। আমরা এখানে এসেছি আমাদের সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য। কারণ এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর দেয়া সম্মাননা। সে সম্মাননা পুনরুদ্ধারের জন্য আজ আমরা মাঠে নেমেছি।’

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালসহ ৭ দফা দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতাকর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা

কর্মসূচিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, রাজশাহী, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের সংগঠনটির প্রায় কয়েক শতাধিক নেতা-কর্মী যোগ দেন।

তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কোটা কোটা কোটা চাই, ৩০ শতাংশ কোটা চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা জেগেছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শফিকুল ইসলাম বাবু, ভাইস চেয়ারম্যান সজীব সরকার, মিজানুর রহমান, ইয়াসিন আকন্দ, তসলিমা রেজা, যুগ্ম মহাসচিব ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হুদা, তিতুমীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সাত দফা দাবি

০১. চাকরির সকল পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করা।

০২. সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন পাস।

০৩. মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন প্রতিনিধিকে ভোটার এবং ১৯৭২-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।

০৪. মুজিব কোটের পবিত্রতা রক্ষা করতে সিনেমা, নাটকের মন্দ চরিত্রে মুজিব কোট নিষিদ্ধ করে আইন পাস করতে হবে।

০৫. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা।

০৬. মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, নির্যাতন ও জমি দখলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

০৭. হাসপাতাল, সরকারি অফিস, বিমান বন্ধসহ সব ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে।

২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে ২০১৮ সালের শুরুতে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন ওঠে। ওই সময় দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ ও জেলা ১০ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল।

আন্দোলনের জেরে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

শুরু থেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানিয়ে আসছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা। একাধিকবার আন্দোলনেও নেমেছেন তারা।

এ বিভাগের আরো খবর