বরগুনা সদর সড়কের সবজিবাজারসংলগ্ন এলাকায় আজীজ মিয়া নামের এক ব্যক্তির নেয়া অস্থায়ী বন্দোবস্তের জমির মালিকানা দাবি করছেন আরও দুজন।
আজীজের (প্রয়াত) স্ত্রী ৭০ বছরের মাজেদা বেগমের অভিযোগ, ওই দুজনের বৈধ কাগজপত্র নেই। তা ছাড়া টাকা খেয়ে বরগুনা সদর ভূমি অফিস ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) গাড়িচালকের সহযোগিতায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরির পাঁয়তারা চলছে।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৪ সালে বরগুনা সদর সড়কের সবজিবাজারসংলগ্ন এলাকায় ১৫.৩৩৪৫ বর্গমিটার জমি আজীজের নামে বন্দোবস্ত দেয় জেলা প্রশাসন। সেই থেকে তিনি প্রতিবছর নবায়ন ফি পরিশোধ করে আসছেন।
মাজেদা বলেন, তার স্বামী ২০১৭ সালে মারা যান। এরপর থেকে তিনি নবায়ন ফি পরিশোধ করে আসছেন। তাদের কোনো ছেলে নেই। তাই বাজারের অদূরে ফেউলীবুনিয়া এলাকায় তার এক মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বন্দোবস্তের ওই জায়গায় একটি মুদি দোকান করেছেন। সেটি তার স্বজনরা চালান। এটিই তার একমাত্র আয়ের উৎস।
এদিকে সম্প্রতি কালেক্টরেট মার্কেট নির্মাণের আওতায় ওই এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারকাজ হাতে নেন মালিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আজীজের বন্দোবস্ত নেয়া ওই জায়গার এখন বাজারমূল্য অন্তত ২০ লাখ টাকা।
মাজেদা নিউজবাংলাকে বলেন, ওই জমি দখলের পাঁয়তারার চেষ্টা টের পেয়ে তিনি দোকানে অবস্থান নেন। গত রোববার রাতের আঁধারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার গাড়িচালক গোলাম মওলা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) গাড়িচালক রাসেল একদল সহযোগী নিয়ে এসে দোকানের ভেতর থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি আরও বলেন, সে সময় এদের সাথে যোগ দেন মাছ ব্যবসায়ী পনু মিয়া ও আসমা বেগম। তাকে মারধরের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
তবে আসমা বেগম বলেন, ‘আমারও ওই জমির মালিকানার কাগজ আছে। আমি সে কারণেই দাবি করেছি।’ ডিসিআর আছে কি না বা কী কী কাগজপত্র আছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার গাড়িচালক গোলাম মওলা বলেন, ‘মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার পর ঘর নির্মাণ বন্ধ রাখার কথা ছিল। কিন্তু মাজেদার পক্ষ কাজ করছে শুনে আমি গিয়ে নিষেধ করে আসি। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
বরগুনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি জহিরুল হক পনু বলেন, ‘আমি আলমের পক্ষে (গোলাম মওলা) কাজ করেছিলাম। আমি তাদের বৈঠকের কথা বলেছি। কিন্তু কেউ শোনেননি। পরে পুলিশ বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব নিয়েছে। আমি এর আগেও নেই, পাছেও নেই।’
জেলা প্রশাসক মো. হাবিুবর রহমান বলেন, ‘মাজেদা বেগম বিষয়টি জানিয়েছেন। লিখিত একটি আবেদনও দিয়েছেন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আমরা মূল ডিসিআরের মালিককে জমি বুঝিয়ে দেব। এ নিয়ে যাতে কোনোরকম জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও আমরা দেখছি।’