চাকরি ক্ষেত্রে সকল পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ সাত দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ। এতে আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ শাহবাগ মোড় অবরোধের এ কর্মসূচি শুরু করে। তাদের সাত দফা না মানা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ছাড়বে না বলেও জানিয়েছে তারা। এই কর্মসূচির ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সাত দফা দাবি
০১. চাকরির সকল পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করা।
০২. সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন পাস;
০৩. মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন প্রতিনিধিকে ভোটার এবং ১৯৭২-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে
০৪. মুজিব কোটের পবিত্রতা রক্ষা করতে সিনেমা, নাটকের মন্দ চরিত্রে মুজিব কোট নিষিদ্ধ করে আইন পাস করতে হবে।
০৫. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা।
০৬. মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, নির্যাতন ও জমি দখলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
০৭. হাসপাতাল, সরকারি অফিস, বিমান বন্ধসহ সব ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার সম্পাদক জামিল আহমেদ রাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০ শতাংশ কোটাসহ সাত দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছেড়ে যাব না।’
আন্দোলন চালিয়ে যেতে নেতা-কর্মীদের অন্তত তিন দিনের খাবার ব্যবস্থাসহ উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জামিল।
সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে ২০১৮ সালের শুরুতে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন ওঠে। ওই সময় দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ, নারীদের জন্য ৫ শতাংশ ও জেলা ৫ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল।
আন্দোলনের জেরে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
শুরু থেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানিয়ে আসছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা। একাধিকবার আন্দোলনেও নেমেছেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঢাকা বিভাগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক ইবনে সায়মন বলেন, ‘জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা বাংলাদেশকে অর্জন করেছে, তাদের উত্তরসূরিরা আজ রোদে পুড়ছি। আমরা এখানে এসেছি আমাদের সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য। কারণ এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর দেয়া সম্মাননা। সে সম্মাননা পুনরুদ্ধারের জন্য আজ আমরা মাঠে নেমেছি।’
যেসব বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, সাংবাদিক কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন এবং এ আন্দোলন করার জন্য ছাত্রদের উসকে দিয়েছেন, তাদের সমালোচনা করে শাস্তির আওতায় আনতে দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
সায়মন বলেন, ‘যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছেন এবং বুকে ‘‘আমি রাজাকার’' শব্দ লিখেছেন তাদের চিহ্নিত করুন। ওরা যেন ভোটাধিকার, সরকারি চাকরি, পাসপোর্ট না পান। তাদের সকল নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত করতে হবে। এটি করা না হলে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হবে।'
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংদের নেতা-কর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকেন।
কর্মসূচিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, রাজশাহী, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের সংগঠনটির কয়েক শ নেতা-কর্মী যোগ দিলে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়।
এতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কোটা কোটা কোটা চাই, ৩০ শতাংশ কোটা চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা জেগেছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শফিকুল ইসলাম বাবু, ভাইস চেয়ারম্যান সজীব সরকার, মিজানুর রহমান, ইয়াসিন আকন্দ, তসলিমা রেজা, যুগ্ম মহাসচিব ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হুদা, তিতুমীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।