২১ আগস্টে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে মো. ইকবাল নিজের হাতে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
এ ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ইকবালকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন এসে এ কথা বলেন বাহিনীটির প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ইকবাল জানিয়েছে, মুফতি হান্নানের (নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা) নির্দেশে সে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। হামলার জন্য মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল।
সে আরও উল্লেখ করে যে, হামলার সময় সে মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল। ঘটনার পর সে ঝিনাইদহে চলে যায়। সেখানেই আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতা-কর্মী।
নানা ঘটনাপ্রবাহের পর এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে হুজির সদস্য মো. ইকবাল পলাতক ছিলেন।
২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৪৯ জন আসামি ছিলেন। যাদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়া হয়।
এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন কারাগারে। এ ছাড়া তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছিল। বাকি তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
আলোচিত এ হামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়ায় ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়।
সে তদন্তে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম আসে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারও তদন্ত হয়।
ওই তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বেশ কয়েকজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাবেক তিনজন আইজিপির নাম আসে। তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।