লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় সামরিক বাহিনীর সব সদস্যকে সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার বিমানবাহিনীর ১১ স্কোয়াড্রন ও ২১ স্কোয়াড্রনকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আমাদের জাতীয় পতাকা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এ পতাকা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যেকোনো ইউনিটের জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়।’
পতাকা অর্জন করা দুই স্কোয়াড্রনের সদস্যদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কর্মদক্ষতা দেশসেবা ও পেশাদারিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যখন দায়িত্ব পালন করেন, আমি মনে করি, আপনারা সব সময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবেন।
‘যেন বাংলাদেশের মানমর্যাদা সব সময় বৃদ্ধি পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’
দেশ স্বাধীনের পর সশস্ত্র বাহিনী গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভূমিকা তুলে ধরেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সীমিত সম্পদ দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলার ব্যাপক কর্মসূচিও তিনি বাস্তবায়ন করেন। সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ মিগ-২১সহ অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টারসহ এয়ার ডিফেন্স রাডার তিনি সংগ্রহ করেন।
‘বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তারই ভিত্তিতে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী করবার জন্য আধুনিক করবার জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি এবং তা বাস্তবায়নে কাজ আমরা শুরু করেছি।’
বিমানবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিমানবাহিনীতে সংযোজন করেছি মিগ-২৯। ১৯৯৬ সালে যখন প্রথমবার সরকারে আসি তখনই এই মিগ-২৯ আমরা সংগ্রহ করেছিলাম।
‘তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফাইটার বিমান, পরিবহন বিমান, ইউটিলিটি হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার, ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র যা আগে কখনও ছিল না। এ ছাড়া নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি।’
‘দেশেই তৈরি হবে যুদ্ধবিমান’
একদিন দেশেই যুদ্ধবিমান তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মহাকাশ গবেষণা এবং দেশের বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমানকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা লালমনিরহাটে প্রতিষ্ঠা হবে। ইতিমধ্যে তার কাজ আমরা শুরু করেছি।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারও নির্মাণ করেছি। আমাদের একটা আকাঙ্ক্ষা আছে বাংলাদেশেই আমরা যুদ্ধবিমান তৈরি করতে পারব। কাজেই এর ওপর গবেষণা করা এবং আমাদের আকাশসীমা রক্ষা আমরা নিজেরাও যেন করতে পারি, সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।’
এ সময় মূল কাজের বাইরেও বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রশংসাও করেন সরকারপ্রধান। পাশাপাশি করোনার মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে আসা এবং দেশের বাইরে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে তার সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আর্থসামাজিক উন্নতি করা। দেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত করা। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। বাংলাদেশের অবস্থানটা যেন আরও দৃঢ় হয়।
‘আমরা সেই থেকে যাত্রা শুরু করে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। করোনা যদিও সারা বিশ্বপরিস্থিতি স্থবির করে দিয়েছে, তারপরও আমরা আমাদের সীমিত শক্তি নিয়ে অর্থনীতির গতিকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশ যেন এগিয়ে যায়। এ ছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
‘এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব এবং এর প্রক্কালে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই নিজেদের দেশপ্রেমিক ও নির্ভীক হিসেবে গড়ে তুলতে।’
অনুষ্ঠানে করোনা টিকা গ্রহণ করার পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষানীতি মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা করোনার টিকা দিতে শুরু করেছি। কিন্তু টিকা দেয়া সত্ত্বেও সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন এবং মাস্ক ব্যবহার করবেন।’