কালচে নীল, বেগুনি ও লালের মিশেলের পাখি কালিম। মূলত জলাভূমিতেই এদের বাস। বুনো পাখি হলেও একে সহজেই পোষ মানানো যায়।
এই পাখি পালনে খুব বাড়তি কিছু করতে হয় না। রাখা হয় বাড়ির আঙিনায় খাঁচায়। খায় ধান, চাল, ভাত। এদের প্রিয় খাবার ছোট মাছ।
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় কদমতলী গ্রামের কয়েকটি পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে পুষছে এই পাখি।
তারাকান্দায় কদমতলী গ্রামে কালিম পাখি পোষেন অনেকে। ছবি: নিউজবাংলাতাদেরই এক জন মনসুর আলী শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দাদা এই পাখি পালতেন। দাদার পর বাবাও এগুলো পালতেন। ছোটবেলা থেকেই এগুলো বাড়িতে দেখে আমারও মায়া জন্মে যায়। এখন আমিই এগুলোর দেখাশোনা করি।’
মনসুর আরও বলেন, ‘এই পাখির প্রতি আমার এমন মায়া তৈরি হয়েছে যে কোনো পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার মনের মধ্যে যেন কেমন লাগে। মনে হয় আমার পরিবারেরই কেউ অসুস্থ। বাইরে থেকে এসে এগুলোর ডাক না শুনলে মনের মধ্যে শান্তি লাগে না।
‘এগুলা পালতেও তো কোনো কষ্ট নাই। বাড়ির অন্যান্য হাঁস-মুরগির মতোই পালতে পারি।’
খাঁচায় রাখা এক জোড়া কালিম পাখি। ছবি: নিউজবাংলাএকই গ্রামের সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা-মার কাছে জেনেছি, আমাদের এলাকায় এগুলো অনেক আগে থেকেই পালা হয়। আমাদের বাড়িতেও আছে এগুলা। দেখতেই সুন্দর লাগে পাখিগুলা।’
মূলত জলাভূমিতে বাস কালিম পাখির। ছবি: নিউজবাংলাশুধু দেখতেই সুন্দর না কালিম পাখি। বাজারে রয়েছে এর বেশ চড়া দর। কালিমের মাংস সুস্বাদু হওয়ায় প্রতি জোড়া বাচ্চা বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর বড় পাখি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়। তাই অনেকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নেন কালিম পাখি পোষা।
কদমতলী গ্রামের তরুণ দীন ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালিম পাখি বছরে তিনবার ডিম দেয়। প্রতিবার ডিম দেয় ১২ থেকে ১৫টি। পাখি বিক্রি করে যে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়, তাতে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে সুবিধা হয়।’
কালিম পালন অনেকের বাড়তি আয়ের উৎস। ছবি: নিউজবাংলাময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা ইয়াছমিন নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশে কালিম পাখির ১৩টি জাত শনাক্ত করা হয়েছে। আগে সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ হাওর এলাকায় এগুলো খুব দেখা যেত। কিন্তু কিছু অসাধু পাখি শিকারির কারণে এগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি একে দুর্লভ পাখি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি পালন শুরু হলে প্রজাতিটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি অনেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।