বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুয়েতে বিচার হলো, বাংলাদেশে কবে?

  •    
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:১২

পাপুল, তার স্ত্রী ও অন্যদের বিরুদ্ধে দুদক ও সিআইডি দুটি মামলা করেছে। সেগুলোর তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

কুয়েতে গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের একটি মামলার বিচার সম্পন্ন করেছে সে দেশের আদালত। অথচ বাংলাদেশে তার নামে করা মামলার তদন্ত ‍ও বিচারে নেই গতি।

পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশে প্রথম মামলা হয় গত ১১ নভেম্বর। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলাটি করে।

দ্বিতীয় মামলাটি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২২ ডিসেম্বর পল্টন থানায় এ মামলাটি হয়।

দেশে বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদকের মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার একটি নির্ধারিত নিয়ম আছে। বিধি অনুযায়ী দায়েরকৃত মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে।

‘তবে সাধারণত তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে ৪৫ কার্যদিবস সময় পান। এরপর আদালতে নিয়ম অনুযায়ী মামলা চলে। এখানে দুদকের তো কিছু করার নেই।’

৪৫ কার্যদিবস শেষ হওয়ার আগেই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন দুদকের ওই কর্মকর্তা।

অন্যদিকে সিআইডির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মামলার তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে দেশের বাইরে তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় হয়েছে। আমরা সেই রায়ের কপি দেখব।

‘কুয়েতেও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হয়েছে। তার তদন্ত প্রতিবেদনও দেখতে হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই মামলা দায়েরের দিন থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিলের নিয়ম। তবে চাইলে আমাদের ঊর্ধ্বতনেরা এই সময় আরও ৪৫ দিন বাড়িয়ে নিতে পারেন।’

পাপুলসহ তিনজনের নামে দুদক যে মামলা করেছে, তাতে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন ইসলামের বিরুদ্ধে। মামলা করেছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এর আগের দিন ১০ নভেম্বর কমিশন সভায় জেসমিন ইসলামের ব্যাংক হিসাবে ১৪৮ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও পাচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে পাপুলের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

জেসমিন ইসলামকে অবৈধ অর্থ আয় ও পাচারে সহায়তার অভিযোগে পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে আসামি করে এ মামলা হয় বলে জানান দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে জেসমিন ইসলামের ব্যাংক হিসাবে ১৪৮ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও পাচারের তথ্য পেয়ে এ মামলা করে দুদক। মামলায় পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলামকেও আসামি করা হচ্ছে।

এরপর ২২ ডিসেম্বর মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাপুলের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন থানায় মামলা করে সিআইডি। এই মামলায় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির, শ্যালিকা জেসমিন ইসলাম, পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, পাপুলের ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন ও লিটনের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হচ্ছেন সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম

দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি জেসমিন ইসলামের ‘জে. ডব্লিউ লীলাবালী’ ও অন্যটি পাপুলের ভাই লিটনের ‘জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল’।

এ মামলাটি করেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন।

মনিরের রূপালী ব্যাংক, রাজারবাগ শাখার একটি হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের নানা স্থান থেকে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা জমা হয়। এগুলো কুয়েত গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেয়া।

জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত বছরের ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয় কুয়েতে।

এরপর পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে ২২ জুন পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।

১৭ জুন এদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক।

এ ছাড়া আট ব্যাংকে এদের নামে থাকা ৬১৩টি হিসাব জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩০.২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

সিআইডির তদন্তে উঠে আসে পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী সাদিকুর রহমান মনির দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের জন্য কুয়েত যেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে নগদ ও ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিতেন।

গত ২৮ জানুয়ারি মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে পাপুলের বিরুদ্ধে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় কুয়েতের আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল জরিমানা করা হয়।

৩০ জানুয়রি এ বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই দুঃখজনক, খুবই দুঃখজনক। এটা লজ্জাজনক। আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ওনার বিরুদ্ধে মোট তিনটি কেস আছে।

‘যেটার রায় হয়েছে, সেটা ঘুষের। আর দুটি হলো ট্রাফিকিং (মানব পাচার) ও মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার)। আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ওই দুইটির রায় এখনও হয়নি।’

এদিকে কুয়েতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সোমবার পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কুয়েতের বাংলাদেশ মিশনের পাঠানো ৬১ পৃষ্ঠার ইংরেজি ও আরবি ভাষার রায়ের কপি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেদিনই পাপুলের সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে সংসদ সচিবালয়।

দুদক সূত্র বলছে, পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা, মেয়েসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা। যেকোনো সময় এসব মামলা করবে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর