কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে একটি শক্তিশালী কৃষি কমিশন গঠনের দাবিসহ সরকারের প্রতি ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক আলোচনায়।
সোমবার ‘কৃষি খাতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ’ নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে ছায়া সংসদ বিতর্ক আলোচনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
আলোচনায় তুলে ধরা অন্য সুপারিশগুলো হচ্ছে- অতি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ, এককালীন সাহায্যের তহবিল গঠন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, প্রণোদনায় কৃষি শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তকরণ, নারী কৃষকদেরও প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্তি, উপকারভোগী নির্বাচনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত, স্বল্পমূল্যে ও সহজ কিস্তিতে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান ও আওতা বাড়ানো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ১০ দফা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যত দ্রুত সম্ভব কৃষিপণ্য কমিশন গঠনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘কৃষিপণ্য কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এটি গঠন করা যেতে পারে। তবে কমিশনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না বরং সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘সংসদে নীতিনির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশে এখন কৃষকের কোনো প্রতিনিধি নেই। যদিও বলা হয়, সরকার কৃষিবান্ধব। কিন্তু কৃষি ও কৃষকবান্ধব হওয়া এক কথা নয়। করোনাকালে সেটি সুস্পষ্ট হয়েছে। সরকার কৃষিবান্ধব হলেই কৃষকের উপকার হবে তা বলা যায় না। কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এসব ক্ষেত্রে কৃষক যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত না হয় তার জন্য সরকারকে কৃষকবান্ধবও হতে হবে।‘
এ সময় তিনি ‘প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় সরকার, এনজিও ও ব্যক্তি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করারও তাগিদ দেন।’
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অর্থনীতিতে কৃষি খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও শুধুমাত্র কৃষকের সংগঠন না থাকায় পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতের মতো এই খাতসংশ্লিষ্টদের দু:খ-দুর্দশায় ততটা গুরুত্ব পায় না।’
কৃষকদের সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ কিংবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআইর মতো সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। বলেন, ‘কৃষকের সুখ, দুঃখ ও অভাব অভিযোগ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলবে কৃষকের এমন একটি সংগঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।’
প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে সরকারি দল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বিজয়ী হয়। এতে বিচারক প্যানেলের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।