বিশ্বের ছোট-বড় সব ভাষা সংরক্ষণ করে রাখা বাংলাদেশের দায়িত্ব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রেখেছি। এটা শুধু আমাদের না, সারা পৃথিবীতে যাদের মাতৃভাষা আছে, তাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য এবং তার ওপর যাতে গবেষণা হয়, এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি।
‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, যখন এটা আমরা শুরু করলাম, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম, তখন জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন কফি আনান, তিনি এসেছিলেন। তাকে নিয়েই ভিত্তি স্থাপন করেছিলাম এবং আমরা নির্মাণকাজ শুরুও করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ সরকার গঠন করি এবং এটার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে আজকে সেখানে আমরা ভাষা জাদুঘরও করেছি। সেখানে আর্কাইভ করা আছে। বিভিন্ন মাতৃভাষার নমুনাও আমরা সংগ্রহ করে রেখেছি।
‘আমাদের কিন্তু একটা মহান দায়িত্ব পড়ে গেছে, সারা বিশ্বের ছোট-বড় যতই হোক মাতৃভাষা সংরক্ষণ করা, সেগুলো সেখানে রাখা এবং গবেষণার সুযোগ করে দেয়া। পৃথিবীতে শুধু এই একটা ইনস্টিটিউশনই গড়ে তোলা হয়েছে মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য। আর কোথাও কিন্তু এ দৃষ্টান্ত নেই।’
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই উন্নয়নের পথে দেশ অগ্রসর হচ্ছে জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্থসামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা, নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনসহ প্রতিটি কাজই বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন অতি অল্প সময়ে।
‘তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। একটি জাতির জন্য এই সময় তো কিছুই না। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যত কাজ তিনি করে যান, আমি যখন সেগুলো দেখি অবাক হই। ২১ বছর পর আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই কাজ শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের যদি ঠিকানা থাকে, ঘর থাকে, তাহলে তার জীবনটা অর্থবহ হয়। আর আমাদের এমন একটি দেশ, প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথবা যেকোনো কারণে হোক সেগুলোও হারা হয়ে যাচ্ছে।
‘আমরাও জাতির পিতার সেই নীতিমালা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থার পদক্ষেপ যেমন নিয়েছি, বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও করছি।’
‘২৪ বছরে পুনর্বাসিত ৯ লাখের বেশি মানুষ’
মুজিববর্ষের নানা কর্মসূচি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য সব বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কয়েকটি বিষয় ব্যাপকভাবে আমরা গ্রহণ করেছি। এই সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। তাদের আমরা একটা ঠিকানা করে দেব।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ২৪ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯৬ সাল থেকে শুরু করেছিলাম। জাতির পিতার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে গুচ্ছগ্রাম, সেটাও যেমন তৈরি করা, পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্প, গৃহহীন তহবিল, বস্তিবাসীর জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচিসহ অনেকগুলো কর্মসূচি নিয়ে প্রত্যেক মানুষের জন্য আমরা যেন একটা ঠিকানা দিতে পারি, জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করতে পারি, এ পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম।
‘সেখানে আমরা সফলতাও অর্জন করেছি যথেষ্ট। এ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা গৃহহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছি। ৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ জন মানুষকে, যারা ভূমিহীন গৃহহীন তাদের আমরা ভূমি দিয়েছি, ঘর দিয়েছি। কোথাও ব্যারাক হাউস করে দিয়েছি। কোথাও আলাদা ঘর করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘যারা নৃগোষ্ঠী তাদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বা বরগুনায় আমরা ঘর করে দিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলেও যেখানে নৃগোষ্ঠী আছে, তাদের জন্য আমরা ঘর করে দিচ্ছি। এমনকি যারা বেদে, নৌকায় বাস করত তাদেরও আমরা জমি দিয়ে পুনর্বাসন করে দিচ্ছি। আমাদের হিজড়া সম্প্রদায় তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েছি।
‘এখনও যারা গৃহহারা হচ্ছে বা ভূমিহীন হচ্ছে, তাদেরও আমরা ঘর করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের উন্নয়নের সকল চিন্তাটা হচ্ছে একেবারে তৃণমূলের মানুষের জন্য। সেখান থেকেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। যাতে এই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হয়।’
‘যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল এ ভাষা আন্দোলন থেকে। এর পরিণতি হয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যদি আমাদের জীবনে না আসত, অনেক আগে এ বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতো।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, শোষিত-বঞ্চিত একটি দেশ। এটা তো একটা প্রদেশ ছিল। তাকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে গড়ে তুলে জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়েছিলেন।
‘আজ তার পদ অবলম্বন করে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পাব, সে স্বীকৃতিও আমরা পাচ্ছি।’
বক্তব্যে তিনি টিকা নেয়ার পরও সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক পরার আহ্বান জানান।