বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারিকালে অন্য রকম প্রভাতফেরি

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১১:১৬

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনার এলাকায় ভিড় খানিকটা বাড়লেও অন্য বছরের তুলনায় ছিল তা নগণ্য। খণ্ড খণ্ড মিছিল থেকে গেয়ে ওঠা একুশের অমর পঙক্তিগুলোও যেন চাপা পড়ে যাচ্ছিল মাস্কের নিচে।

বাঙালির একুশে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে ভোরে খালি পায়ে প্রভাতফেরি আর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এবারও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগের দিনটিতে সেই আবেগ আর ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারের উদযাপনে দেখা গেল ভিন্ন রূপ।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। রক্তের দামে এসেছিল মায়ের ভাষা বাংলার স্বীকৃতি। আর তার সিঁড়ি বেয়েই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতা। মহান একুশে তাই বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সোপান।

সময়ের পরিক্রমায় বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকাররক্ষার উপলক্ষে। দিনটি স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গর্ব আর শোকের দিনটি পালন করে জাতি। যার সূচনা হয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে।

তবে মহামারির বাস্তবতায় ঈদ, পূজা-পার্বণের মতো ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের আয়োজনটিও উদযাপিত হচ্ছে তুলনামূলক সীমিত পরিসরে। যে কারণে ভোর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে মানুষের চিরাচরিত সেই ঢল দেখা গেছে কমই।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনার এলাকায় ভিড় খানিকটা বাড়লেও অন্য বছরের তুলনায় ছিল তা নগণ্য। খণ্ড খণ্ড মিছিল থেকে গেয়ে ওঠা একুশের অমর পঙক্তিগুলোও যেন চাপা পড়ে যাচ্ছিল মাস্কের নিচে।

মহামারির কারণে এবার শহীদ মিনার এলাকায় ছিল বাড়তি বিধিনিষেধ। আয়োজকেরা এবার সংগঠন পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ জন, ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে দুই জনকে শহিদবেদিতে ফুল দেয়ার নিয়ম বেঁধে দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি।

অন্যবারের তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ছবি: নিউজবাংলা

১৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচলের একটি রুট ম্যাপ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। সে অনুসারে শহীদ মিনারে ফুল দিতে সবাইকে পলাশী মোড় হয়ে ঢুকতে হয়।

ফুল দেয়ার পর চানখাঁরপুল ও শহীদ মিনারসংলগ্ন ঢাকা মেডিক্যাল অভিমুখী সড়ক দিয়ে বের হয়ে যান শ্রদ্ধা জানাতে আসা ব্যক্তিরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ছিল বন্ধ।

পলাশী মোড় থেকে ঢুকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত পৌঁছাতে সবাইকে অন্তত চারটি নিরাপত্তাচৌকি পার হতে হয়। পলাশী থেকে ঢোকার মুখেই আগতদের গায়ে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায় রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের। অন্য চৌকিগুলোতে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যকেও স্যানিটাইজার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মাইকে বারবার জানানো হয় মাস্ক পরার আহ্বান।

এ ছাড়া এবারের প্রভাতফেরিতে শিশু-কিশোর ও নারীদের অংশগ্রহণও ছিল অনেক কম।

এর মধ্যে দেখা গেল লালবাগ থেকে তিন স্কুলপড়ুয়া বন্ধু শুভ্র, গীতা ও হুমায়রা এসেছে শহিদবেদিতে ফুল দেয়ার জন্য। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

তারা জানায়, গতবার একসঙ্গে ১৪-১৫ জন বন্ধু একসঙ্গে এসেছিল শহীদ মিনারে। ভিড়ের কারণে দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর শহিদবেদি পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। কিন্তু এবার এতটা ‘ফাঁকা’ থাকবে সেটা ভাবতে পারেনি তারা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগতদের শরীরে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। ছবি: নিউজবাংলা

কাছেই দেখা গেল বিক্রির জন্য ফুটপাতের ওপর কিছু ফুল বিছিয়ে বসেছে দুই পথশিশু। জানা গেল, নিরাপত্তার ফাঁক গলে এই ফুলগুলো তারা শহিদবেদি থেকেই কুড়িয়ে এনেছে।

একজন বলে, ‘অন্যবার অনেক ফুল পাইসি। লোকে সাইধা হাতে ধরায়া দিসে। এইবার তো ভিত্রে ঢোকাই কঠিন। কোনোভাবে একবার ঢুইকা কিছু ফুল নিয়া আসছি।’

অদূরে জগন্নাথ হলের সামনে বর্ণমালাখচিত পতাকা, মাথার ব্যান্ডসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছিলেন ষাটোর্ধ্ব আবদুর রব। বলেন, ‘অন্যবার এতক্ষণে আমার সব মাল বেচা হয়্যা যায়। এইবার অর্ধেকও হয় নাই।’

এ বিভাগের আরো খবর