একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্ত হওয়ার পর ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে জেলা সদরের ডিএস রোড এলাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখানেই প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন না মুক্তিযোদ্ধারা।
শহীদ মিনারের জায়গা নিয়ে মামলা ও আদালতের স্থগিতাদেশের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ককশিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শহীদমিনার। রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় সেখানেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন সুনামগঞ্জের সব বীর মুক্তিযোদ্ধা।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৪ সালে শহীদ মিনারের জায়গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এমন দাবি করে আদালতে মামলা করা হয়। ওই মামলায় পরে শহীদ মিনারের জায়গার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের সময় ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত করার পর এই স্থানেই শহীদ মিনার তৈরি করি। তাই আমরা জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ করেছি। পরে ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা দেয়ার জন্য পক্ষভুক্তি চেয়ে একই আদালতে আমি পিটিশন করি। সে সময় আদালত আমার পিটিশন খারিজ করে দেয়।
‘বর্তমানে আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তাই আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাব না। আমরা ছোট করে ককশিট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শহীদ মিনার তৈরি করেছি, সেখানেই ফুল দেব।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ আমার কাছে শহিদদের অবমাননা। আমরা আদালতের বিরুদ্ধে যেতে পারব না, কিন্তু শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিব না তাও হয় না। তাই আমরা রাতের মধ্যেই ছোট পরিসরে শহীদমিনার তৈরি করেছি।’
রোববার দুপুরে এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নুরুল মোমেন বলেন, ‘আদালতের মামলা ও নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা সেখানে ফুল দেব না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
‘আদালত নিষেধাজ্ঞা তুললে ও মামলাটি প্রত্যাহার হলে আমরা আবারও ফুল দেব। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই ফুল দেয়া হবে।’
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তুতি সভায় মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার জন্য।
‘কিন্তু তারা বললেন, যেহেতু আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আমরা সেখানে ফুল দেব না। অস্থায়ীভাবে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ফুল দেব।’