অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার শিকার হলে কী করবেন, সে পরামর্শ দেয়া হয়েছে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘আমার আইন, আমার অধিকার’ অনুষ্ঠানে।
সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতারণার শিকার হলে কী কী আইনে মামলা করা যাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটায় কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, ক্রেতা বা বিক্রেতার কী আইনি অধিকার আছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা। অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয় পদ্মা ব্যাংকের সৌজন্যে।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অ্যাডভোকেট আফরিন জাহান খান।
মিতি সানজানা বলেন, ‘করোনাকালে অনলাইন কেনাকাটায় নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনের মুদি সামগ্রী থেকে শুরু করে কাপড়, ইলেক্টনিকসহ নানা ধরনের পণ্যই অনলাইনে কেনাকাটা করেছি আমরা। কিন্তু প্রতারণার শিকার অনেকেই হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে পণ্যের গুণগত মান বিচারের সুযোগ না থাকায় ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হয়। অনেক সময় পণ্য ভুলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রতারিত করা হয়।’
তবে শুধু ক্রেতা নয় বিক্রেতাও প্রতারণার শিকার হতে পারেন। দেখা যায়, একজন ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে দাম পরিশোধ করছে না।
মিতি সানজানা বলেন, ‘ক্রেতাদের পণ্যের গুণগত মান, একটি বলে অন্যটি দেয়া, দামী ব্যান্ডের কথা বলে নকল দেয়ার ঘটনা ঘটে।’
প্রতারিত হলে প্রতিকারের কী কী আইন আছে- উপস্থাপিকার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার শিকার হলে দেওয়ানী ও ফৌজদারী দুই ধরনের মামলাই করতে পারেন যে কেউ। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার আইন এবং ১৮৭২ সালের কনট্রাক্ট আইনে প্রতিকার পেতে পারেন। এ ছাড়া দ্য সেল অব গুডস অ্যাক্ট রয়েছে।’
পণ্য কেনা-বেচার ক্ষেত্রে টাকা পয়সা নিয়ে প্রতারণা করলে দণ্ডবিধিতে শাস্তির বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি।
মিতি সানজানা জানান, কনট্রাক্ট আইনে দুই জনের মধ্যে চুক্তি থাকে। যখনই পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কনফার্ম হয়ে গেলে দুই জনের মধ্যে কনট্রাক্ট হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে চুক্তি ভঙ্গ হলে যে কোনো পক্ষকে আইনের আওতায় আনা যাবে।
মিতি সানজানা বলেন, ‘অনলাইনে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যে পেইজ থেকে পণ্য কেনা হচ্ছে তার জনপ্রিয়তা, রিভিউ কেমন এটা দেখার দরকার। রিভিউটা দেখা খুব জরুরি, এ ক্ষেত্রে প্রতারিত হলে দেওয়ানী মামলা করা যায়।’
অগ্রিম টাকা পরিশোধ নিয়ে এক দশর্কদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফোন নম্বর বা ফেইসবুক আইডি লোকেট করে রেখে দেয়া প্রয়োজন। যে নম্বর থেকে ফোন দেয়া হচ্ছে, তা সেভ করে রেখে দেয়া যেতে পারে।’
অনলাইনে কেনাকাটায় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় ব্র্যান্ড না হলে এডভান্স পেমেন্ট করা ঠিক না। এ ছাড়া যে কেউ ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্য কেনা-বেচা করতে পারেন।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যখন ক্রেতা ভুয়া আইডি দিয়ে পণ্য অর্ডার করেন, সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যেতে পারে। এ ছাড়া এ জন্য ডিএমপির সাইবার ক্রাইমের একটি স্পেশাল ইউনিট রয়েছে। পাশাপাশি ফেইসবুক পেইজে রিপোর্ট করা যেতে পারে।’
কেউ যে প্রতারণার শিকার হয়েছেন- এটা কীভাবে প্রমাণ করা যাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার মামলা করার জন্য কোনো কিছুর দরকার হয় না। …একটা পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য দিলে সে ক্ষেত্রে সেল অব গুডস অ্যাক্ট আছে। সেখানে বলা আছে, কোনো পণ্য বিক্রির পর যদি তার সঙ্গে না মেলে না অবশ্যই অপরাধ।’
তিনি বলেন, ‘কোনো পণ্য কেনার আগে ক্রেতাকে অবশ্যই দেখার সুযোগ দিতে হবে। পণ্য কেনার পর তা যাচাই করার সুযোগ দিতে হবে। এটা ক্রেতার আইনগত অধিকার। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যবসা করছেন তাদের ক্রেতাদের অবশ্যই এ সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ছবি দেখে পণ্য কেনা হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় হলো স্ক্রিনশট নিয়ে রাখা। এটা প্রতারণা থেকে বাচাঁরও উপায়। এ ক্ষেত্রে মামলা করারও প্রয়োজন হয় না।’