বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চুড়িহাট্টা স্বাভাবিক, দুর্ভোগে নিহতদের পরিবার

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৩৮

নূর নবী বলেন, ‘আমাদের সরকার থেকে টাকা পয়সা কিছুই দেয়নি। তবে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন মাস্টাররোলে চাকরি দিয়েছেন। সেটাও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর। আমরা কখনও রাস্তায় ঝাড়ু দেইনি। এখন এই আগুন লাগার কারণে রাস্তায় ঝাড়ু দিতে হচ্ছে।’

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার রাতে।

দুই বছর আগে সেই শাহী মসজিদের সামনের পোড়া ভবনগুলোকে মনে হয়েছিল একেকটা ভুতুড়ে

বাড়ি। ক্যামিকেলের গোডাউন থাকা ওয়াহেদ ম্যানসন ফের ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনহারা মানুষ। অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে নিদারুণ অর্থকষ্টে এখনও দিশেহারা।

শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২০টি পরিবারকে নগদ ছয় হাজার টাকা করে দেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম।

সেখানেই কথা হলো চুড়িহাট্টার আগুনে কয়েক জন নিহতদের স্বজনের সঙ্গে।

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছিলেন মো. জুম্মন। বাবার পরিচয় দিতে এখনও ছবি নিয়ে ফিরছেন তার ছেলে ফজলে রাব্বি।

কেমন আছেন জানতে চাইলে বললেন, ‘আমার বাবাই ছিলেন পরিবার চালানোর একমাত্র মানুষ।

আমরা পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চার জনই পড়াশোনা করি। ঠিক মতো দিন চলে না। আমরা বেশ

কষ্টের মধ্যেই চলছি।’

রাব্বি বলেন, ‘তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন উচ্চশিক্ষিতদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। আমার দাবি হচ্ছে, যাদের চাকরি দিবেন বলে সাবেক মেয়র বলেছিলেন এটা যেন পূরণ করা হয়।’

এই ভবনে থাকা ক্যামিকলের গোডাউনের কারণেই বিস্তৃত হয়েছিল আগুন

চুড়িহাট্টার আগুনে বাবা, বোনজামাই ও চাচাত ভাইকে হারিয়েছেন নূর নবী। তার বাবা সুজন হক ওয়াহেদ ম্যানসনের দারোয়ান ছিলেন। ভবনটির সামনে পানের দোকান করতেন বোনজামাই মো. ইব্রাহীম। তার সঙ্গে ছিলেন চাচাত ভাই আনোয়ার।

নূর নবী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আব্বুর শেষ কথা হয়েছিল, মাস শেষে তিনি বাড়ি যাবেন। আমার দুলাভাইও তার পরের দিন বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। পরের দিন তিনি ঠিকই বাড়ি যান, তবে লাশ হয়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আয় দিয়েই সংসার চলত। আব্বু মারা যাওয়ার পর আমরা এমন অবস্থায় পড়েছি যে থাকা খাওয়ারও অনেক কষ্ট হচ্ছে।

নূর নবী বলেন, ‘আমাদের সরকার থেকে টাকা পয়সা কিছুই দেয় নি। তবে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন আমাদের মাস্টার রোলে চাকরি দিয়েছেন। তবে তা পরিচ্ছন্নতা কর্মীর। আমরা কখনও রাস্তায় ঝাড়ু দেইনি। এখন এই আগুন লাগার কারণে আমাদের রাস্তায় ঝাড়ু দিতে হচ্ছে।’

সিটি করপোরেশনের চাকরটি স্থায়ী করার দাবিও জানান নূর নবী।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি আমাদের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা এসেছে। কিন্তু তাও আমরা পাইনি। সরকারের প্রতি বলব আমাদের দিকে তাকান। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

আবার নতুন করে নির্মিত হয়েছে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন

ওই এলাকায় এসে আহাজারি করছেন বৃদ্ধা তারামনি ও তার বোন জরিনা। সেদিনের আগুনে তার দুই ছেলে ও এক নাতি নিহত হন। তার দুই ছেলেই চাকরি করতেন চকবাজারের দোকানে।

তারামনি জানালেন, উপার্জনক্ষম ছেলেদের হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। ছেলেদের বউ রয়েছে। এখন তারাও ঠিক মতো খোঁজ-খবর নেয় না।

কান্নাভেজা কণ্ঠে বললেন, ‘আমার পোলা দুইডা মারা যাওনের পর অনেক কষ্টে আছি। আমার দেশের বাড়ি বিক্রমপুর, হ্যানে আমার কিছুই নাইক্যা।’

সিটি করপোরেশন থেকে কোনো সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তারামনি বলেন, ‘আমি কিছু পাইনি। ছেলে বউরা পাইলে আমি জানি না। তবে তারা অ্যাহন আমাদের দেখে না।’

শনিবার চুড়িহাট্টার আগুনে নিহদের স্বজনদের হাতে সহায়তা তুলে দেন সাংসদ হাজী সেলিম।

আগুনে বাবা জয়নাল আবেদীনকে হারিয়ে এখন পরিবার নিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন রিপন। মা, দুই ভাই ও এক বোন নিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

রিপন বলেন, ‘আমাদের বাসা ২৬ নম্বর আজগর লেনে। আমার বাবা সেদিন এখানে এসেছিলেন ওষুধ নিতে। এ সময়ই আগুনে মারা তিনি।’

যা ঘটেছিল সে দিন

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের চার তলা ভবন ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুন লাগে। ভবনটিতে কেমকেলের গোডাউন থাকায় আগুনের বিস্তৃতি ও তীব্রতাও হয়েছিল ভয়াবহ। যা পরে খুব দ্রুতই আশপাশের কয়েকটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।

ওই রাতের আগুনে নিহত হন ৭৮ জন। পরের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া গাড়ি ও যানবাহন।

সে সময় ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, সেখানে অনেক দাহ্য পদার্থও ছিল। যা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে ছড়িয়েছে। প্লাস্টিক ও স্পিরিট জাতীয় উপকরণও ছিল অনেক। যা আগুন উসকে দিয়েছে।

চুড়িহাট্টা এখন যেমন

দুই বছর পার হওয়ায় আগের বাণিজ্যিক ব্যস্ততা ফিরে এসেছে এলাকাটিতে। ওয়াহেদ ম্যানসনেও নতুন ভবন তৈরী হয়েছে। চলছে যানবাহনও। তবে নতুন ভবনে এখনও বাইরে চুনকাম করা হয় নি।

চুড়িহাট্টা মোড়ের বাসিন্দা সাকিব বললেন, ‘আগুন লাগনের মতোই এখন ফের জইমা গেছে এলাকা।

কাউকেই ক্যামিকেল ব্যবসা করতে দিবেন না হাজী সেলিম

সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংসদ হাজী সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘এলাকায় ক্যামিকেল ব্যবসা যেন করা না যায় সেজন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

অগ্নিকাণ্ডের স্মরণে প্রতি বছর অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

ক্যামিকেল ব্যবসা বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাজী সেলিম সাহেব কাউকেই ক্যামিকেল ব্যবসা করতে দিবেন না। করোনা মহামারির কারণে আমরা এ সংক্রান্ত কাজ করতে পারিনি। এখন আবার শুরু হয়েছে। শিগগিরই ক্যামিকেল ব্যবসা সরানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর