মানুষ কতভাবেই না শান্তি খোঁজে!
৪০ বছরের মধ্যবয়সী আলী মুর্তাজা। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা সদরের মুদি দোকানি। এলাকারই বাসিন্দা। রাস্তায় যখন অভাবী ও অনাহারী মানুষ খাদ্যের জন্য হাত পাতে, কখনও কেউ সাহায্য করে, আবার কেউ তাচ্ছিল্য করে।
করোনাকালে অনেক মানুষ কাজ হারালে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের যখন অভাব চরম সীমায় পৌঁছে যায়, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন এদের মুখে খাবার তুলে দেবেন।
একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলছিলেন শুরুর কথা। জানালেন, তখন তিনি নিজের দোকানের ফ্রিজ দোকানের বাইরে এনে সেখানে অনাহারীদের জন্য খাবার রাখা শুরু করলেন। ফ্রিজটির নাম দিলেন ‘শান্তির ছোঁয়া’।
প্রথম খাবার সরবরাহ শুরু করলেন গত বছরের ৬ জুন। প্রতিদিন দুপুরে ৬০ জনকে ভাত ও মাছ-মাংস কিংবা সবজি দেন। তারপর কেউ এলে শুকনো খাবার, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট দেন।
নিজের উদ্যোগেই নিজের টাকা দিয়ে শুরু, এটা নিয়ে তিনি বেশি কথা বলতেও আগ্রহী নন, শুধু অনাহারীদের মুখে খাবার তুলে দিতেই ওনার যত আগ্রহ।
প্রতি মঙ্গলবার তিনি কিছুসংখ্যক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, লবণ, তেল, ডাল দিয়ে থাকেন।
দোকানের বাইরে রাখা ফ্রিজ
ইদানিং অনেকে সাহায্য করতে চান। তিনি আলী মুর্তাজা তাদের থেকে সরাসরি কোনো টাকা নেন না, তাদের জিনিসপত্র কিনে দিতে বলেন, সেসব জিনিস ফ্রিজে রাখা হয়। অনাহারী যারা নিজেরাই ফ্রিজ থেকে সে খাবার নিয়ে খায়, তাদের অনুমতিও নিতে হয় না।
আলী মুর্তাজা কথা বলার সময় আবেগে চোখে পানি চলে আসে। বললেন, ‘অনাহারীরা যখন তৃপ্তি নিয়ে খায়, তখন সেটা দেখে নিজেকে এত সুখী মনে হয়, জীবনে এর থেকে বেশি কিছু পাওয়ার নেই।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও মনিরামপুরের বাজারের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, ‘এলাকায় তার উদ্যোগে সবাই গর্ববোধ করছে। সাধারণ অনেকে এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে। মানুষের জন্যে তার এমন মমত্ববোধ সবাইকে নাড়া দিচ্ছে।’
ঢাকার তরুণ চিত্রশিল্পী চারু পিন্টু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী অসাধারণ ব্যাপার! মানুষ এখনও মানুষকে নিয়ে ভাবে তাই পৃথিবী এত সুন্দর।’