সাত মাস আগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের পূর্ব বেতবাড়িয়া গ্রামে এক তরুণীর মৃত্যু হয় লিভার ক্যান্সারে। জানাজার সময় মেয়ে পক্ষ ছেলের পরিবারের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেরার অভিযোগ তোলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারেল লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বেতবাড়ী গ্রামের হবিবর রহমান হবি। মেয়ে পক্ষ থানায় অভিযোগ করলে দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে হবিবুরকে থানায় মীমাংসার জন্য ডেকে পাঠান উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস।
রাত বেশি হওয়ায় সে দিন থানায় যাননি হবিবুর বা কোনো পক্ষের কেউ। ওসির ডাকে সাড়া না দেয়ার খেসারত দেয়া শুরু হয় তখন থেকেই। হাতাহাতির ঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ বা মামলা না করলেও শুরু হয় আটক বাণিজ্য।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রাত হলেই ওসি দীপক পুলিশ নিয়ে হানা দেন গ্রামে। যাকে পান, তাকেই ধরে নিয়ে যান থানায়। এরপর ছাড়িয়ে আনতে হয় টাকা দিয়ে। অথচ কারও বিরুদ্ধে নেই কোনো মামলা।
আটকের ভয়ে গ্রামটি এই সাত মানে অনেকটা পুরুষ শূন্য। দিনে দেখা গেলেও রাতে গ্রামে পুরুষ মানুষ থাকে না বললেই চলে।
শুধু আটক নয়, ওসি দীপকের বিরুদ্ধে পুলিশি হয়রানির পাশাপাশি বসতঘর ভাঙচুর করে আসবাব ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকার পরও থানায় আটকে রেখে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে।
বেতবাড়ি গ্রামের সাইফুদ্দিন বলেন, ‘ওসি নিজে তার পুলিশ বাহিনী নিয়ে প্রতিদিন রাতে হানা দেয়। এ সময় গ্রামের মানুষ যে দিকে পারে পালাতে থাকেন। অন্ধকারে পালাতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। আমি বৃদ্ধ হয়েও কয়েকবার পালাতে হয়েছে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ছুটিতে আসা এক র্যাব সদস্য ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এর একটি সমাধান হওয়া খুব জরুরি।’
উপজেলার একটি কলেজের অনার্স পড়ুয়া আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রাত হলেই পুলিশের অভিযান শুরু হয়। আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা দুঃশ্চিন্তায় থাকি। যাকে ধরছে টাকার বিনিময়ে ছাড়াতে হচ্ছে। আমরা টাকা পাব কোথায়। আর এভাবে কেনই বা হয়রানির শিকার হব?
গ্রামের বিধবা মনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী মারা গেছেন দুই যুগ আগে। এক নাতনিকে নিয়ে থাকেন। কিন্তু তিনি প্রতিদিন পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ট। বাড়ি ঘর ভাঙচুর, টাকা-পয়সা লুটসহ মারধর করে পুলিশ। কিন্তু কি কারণে এগুলো হচ্ছে সেটাও বলে না পুলিশ। তার প্রশ্ন, দেশে কী আইন, বিচার নাই?
এলাকার খামারি নিজামুল হক বলেন, ‘বাবাকে ফোন করে থানার দারোগারা টাকা চান। নইলে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দেবেন বলে একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন। আমরা এখন চরম অশান্তির মধ্যে আছি।’
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস বলেন, ‘বেতবাড়ী গ্রামে কারও বিরুদ্ধে মামলা নেই, তবে এখন মামলা হবে।’
মানুষজনকে আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো গ্রেপ্তার বাণিজ্য করিনি। মানুষ আমার নামে কুৎসা রটাচ্ছে।’
ঘটনার সত্যতা বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি বলে জানান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সিরাজগঞ্জে কর্মরত থাকা অবস্থায় কোনো গ্রেপ্তার বাণিজ্য হবে না। আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানলাম। বিষয়টি একজন সিনিয়র অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করা হবে। এরপর সত্যতার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’