বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাপুলের এমপি পদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৪৫

পাপুলের বিরুদ্ধে দেয়া কুয়েত সরকারের সাজা দেয়ার রায়ের কপি পাওয়া কথা জানিয়ে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রায়ের কপি পাওয়ার পরই সংসদ সচিবালয় পরবর্তী পদক্ষেপের কাজ শুরু করেছে। তবে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় সোমবার এ কাজে গতি পাবে।

কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের পদ বাতিলে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রাষ্ট্রীয় ছুটি শেষে সোমবার এই কাজে গতি আসবে।

সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, তারা বৃহস্পতিবারই রায়ের কপি পেয়েছেন। এরপর সংসদ সচিবালয় পরবর্তী পদক্ষেপের কাজ শুরু করেছে। তবে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় সোমবার এ কাজে গতি পাবে।

পাপুলের সাজার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে গত ২৮ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী কারও দুই বছরের সাজা হলে তিনি সংসদ সদস্য পদের অযোগ্য।

তবে পাপুল যেহেতু দেশের বাইরে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাই তার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় যা উঠেছিল, সেটি শুরুতেই নাকচ করেছেন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

পাপুলের সাজা হওয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে রায় পাওয়ার অপেক্ষায়।

পাপুলের সাজা দেয়ার রায়ের কপি পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ফাইল ছবি

শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস রায়ের কপি তাদের কাছে পাঠিয়েছে এবং তারা তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এতদিন রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কারণ, এর আগে আমরা কেবল পত্র-পত্রিকায় সংবাদটি জেনেছিলাম। আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা প্রমাণ ছিল না। এখন আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে রায়ের কপি পেয়েছি।’

সংবিধান অনুযায়ী, পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন স্পিকারই।

এখন কী পদক্ষেপ নেয়া হবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার কপি সংসদ সচিবালয়ে এসেছে। আমরা কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। প্রথমে রায় পর্যালোচনা বৈঠক করা হবে। পর্যালোচনার পর সদস্যপদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

শাসনতন্ত্রের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

তবে এই সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, সংসদ সদস্য কোনো ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশ আটক হলে, গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ফরমে গ্রেপ্তার, দণ্ডাদেশ বা আটকের কারণসহ পুরো বিষয় স্পিকারকে জানাবে।

সাজার রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতীয় সংসদের হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আইনে তার আর সংসদ সদস্য থাকার সুযোগ নেই। কোনো আইনি ব্যত্যয় ঘটবে না। পার্লামেন্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’

এখন তো সংসদ অধিবেশনে নেই। তাহলে সিদ্ধান্ত কি ঝুলে থাকবে?- এমন প্রশ্নে হুইপ বলেন, ‘সংসদ অধিবেশনে না থাকলেও সংসদ সচিবালয় আছে। আছে স্পিকারের দপ্তরও। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

গত বছরের ৬ জুন পাপুলকে আটক করে কুয়েত সরকার। সে দেশে তার ব্যবসা রয়েছে। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ মামলা করা হয়।

পাপুল যেভাবে সংসদ সদস্য

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যাওয়ার কয়েক দশকের মধ্যে ধনকুবের হয়ে যাওয়া পাপুল একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হন।

সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল।

তবে ভোটের আগে আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান সরে দাঁড়ান। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাপুলের পক্ষে কাজ করেন।

পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের আসন বণ্টনের হিসাবে নারী আসনের একটি পেয়েছিলেন এবং তারা সেলিনাকে মনোনয়ন দেন।

পাপুলের স্ত্রীও আসামি

পাপুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানও অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলার আসামি।

দুর্নীতি দমন কমিশন গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করে। এই মামলায় সেলিনা এবং ওয়াফা গত ২৭ ডিসেম্বর জামিন পান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ করে তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলেও বলা হয় মামলায়।

সংসদ সদস্য পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম

বলা হয়, এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন।

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

সেলিনা ইসলাম এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের আট ব্যাংকের ৬১৩টি হিসাব জব্দও করেছে দুদক।

তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক। এজন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়েও চিঠি দিয়েছে কমিশন।

এ বিভাগের আরো খবর