বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘দুর্গেই’ বিলীনের পথে জাতীয় পার্টি

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১০:৩৯

এই অঞ্চলের মানুষের এক সময়ের বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক ছিল ‘লাঙ্গল’। দলটির ওপর সেই আস্থা দিন দিন মিলিয়ে যাচ্ছে। সংসদীয় আসন প্রায় শূন্যের কোঠায় আসার পর এর প্রমাণ দেখা যাচ্ছে এবারের পৌরসভা নির্বাচনেও।

লাঙ্গলের দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর বিভাগে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি (জাপা)। সংসদীয় আসন অনেক কমে আসার পর পৌর নির্বাচনেও চরম সংকটে পড়েছে দলটি।

স্থানীয়রা বলছেন, দলের নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব এবং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তহীনতা এর বড় কারণ। তবে নেতারা দলের এই পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের দাপটকে দুষছেন। জাপার বেসামাল অবস্থার সুযোগে দুর্গ দখলে উঠেপড়ে লেগেছে আওয়ামী লীগ।

এই অঞ্চলের মানুষের এক সময়ের বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক ছিল ‘লাঙ্গল’। দলটির ওপর সেই আস্থা দিন দিন মিলিয়ে যাচ্ছে।

এর প্রমাণ এবারের পৌরসভা নির্বাচনে। এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে ২০টি পৌরসভায় ভোট হয়েছে। এর মধ্যে কেবল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মেয়র পদটি লাঙ্গলের ঘরে গেছে।

এখানে মাত্র ২ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছেন জাপার আব্দুর রশিদ রেজা। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ভোট পান ২ হাজার ৫৫৮টি।

সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ রেজা

বাকি ১৯টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র ৭টিতে প্রার্থী দিয়েছে দলটি।

এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-১ আসনে (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী) জাপার আব্দুর রহমানকে হারিয়ে ১১ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন ফাকু। আব্দুর রহমান পান ৯ হাজার ৩০৭ ভোট। এই একটিতেই সম্মানজনক ভোট পেয়েছে লাঙ্গল। অন্যগুলোতে লজ্জাজনক হার হয়েছে জাপা প্রার্থীদের।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আফরোজা পারভিন মাত্র ৪৪ ভোট পেয়েছেন।

লালমনিরহাট সদর পৌরসভা নির্বাচনে তার দলের প্রার্থী এসএম ওয়াহেদুল হাসান সেনা ভোট পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৯৭১টি। তার চেয়ে ৯ হাজার বেশি ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রেজাউল করিম স্বপন।

দিনাজপুর সদর পৌরসভায় জাপার প্রার্থী ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শফি রুবেল। ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫৪। ৪৪ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিএনপির সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম এখানে মেয়র হন।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভায় জাপার তৈয়ব আলী ভোট পান মাত্র ৪২০। আর রাণীশংকৈলে আলমগীর হোসেন পান ২১৩ ভোট।

আর নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এখানে জাপার প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম। তাকে লড়তে হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৫টি সংসদীয় আসনের মাত্র ৭টি ধরে রাখতে পেরেছে জাতীয় পার্টি। অথচ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই ৩৫টির মধ্যে ২১টিই ছিল জাপার।

এখন এই সাতটি আসনের মধ্যে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের রয়েছেন লালমনিরহাট সদরে, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা রয়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া আসনে, এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ রয়েছেন রংপুর সদরে, এরশাদের ভাগনে আদেলুর রহমান রয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে এবং মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল রয়েছেন জলঢাকায়। এই অঞ্চলে দলের হেভিওয়েট নেতারা থাকলেও মাঠপর্যায়ে দল বেসামাল।

জাপার বেহাল হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন দীর্ঘদিন ধরে রংপুরের রাজনীতি দেখে আসা ফখরুল আনাম বেঞ্জু। তার দৃষ্টিতে জাপার ভরাডুবির কারণগুলো হলো- দলটির সিদ্ধান্তহীনতা, সরকারে থেকে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা, দলীয় চেইন অব কমান্ড না থাকা, স্থানীয় ‘হেভিওয়েট নেতাদের মূল্যায়ন না করে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া, মাঝেমধ্যেই দলের নেতাদের পদবদল করা, নিজ প্রার্থীদের পক্ষে জোরালোভাবে কাজ না করা এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে যোগাযোগ না রাখা।

তিনি বলেন, ‘একটা সময় রংপুর অঞ্চলকে জাতীয় পাটির দুর্গ বলা হতো। কিন্তু কিছু ব্যক্তি ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে মহাজোট তৈরি করতে গিয়ে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে সরে গিয়েছেন।’

তবে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মনে করেন, আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী ফোরামকে অনুরোধ করব দলের স্বার্থকে জলাঞ্জলি না দিয়ে দলের স্বার্থকে আগে রেখে যদি কারও সঙ্গে জোট করতে হয় তা হলে হবে। জাতীয় পার্টি যেসব জায়গায় লড়াই করার যোগ্যতা রাখে, সেগুলো আমরা ছাড় দেব কেন? সেগুলো ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

‘জোটের খেলায় আসন বণ্টনের সময় এমন একটা অবস্থা তৈরি করে আওয়ামী লীগ, যেন মনে হয় তাদের দয়ার বস্তু হয়ে গেছে জাতীয় পার্টি। আমি এবং আমরা এই জাতীয় পার্টির চেহারা দেখতে চাই না।’

জাপার এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির আসন ছাড় দিয়ে কারও সঙ্গে ঐক্য নয়। বৃহত্তর রংপুরে আমাদের অস্তিত্ব আছে। সেগুলো কেন উৎসর্গ করব অন্যকে? যদি এই আসন উৎসর্গ করে অন্য কারও সঙ্গে আঁতাত করতে হয়, তা হলে এটি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা কোনো দিনই একমত হতে পারি না, পারব না।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে আগের অবস্থায় ফিরে আনতে আমরা কাজ করছি।’

জাপা নেতার এসব অভিযোগের বিষয়ে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘মানুষ এখন আর সস্তা আবেগকে বিশ্বাস করে না। মানুষ উন্নয়ন চায়, যা আমাদের নেত্রী করেছেন এবং এখনও করছেন।’

তিনি বলেন, ‘লাঙ্গল-নৌকা একসঙ্গে থাকলে লাঙ্গলের ব্যালটে ভোট পড়ে না। কারণ আমার নেত্রী উন্নয়নে বিশ্বাসী। মানুষও উন্নয়ন চায়। উন্নয়ন দেখে মানুষ লাঙ্গলকে ভুলে গেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর