বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেরানীগঞ্জে ডোবায় তিনতলা ভবন

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১০:০৯

খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট। আহত ও আটকে পড়াদের উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। সাত জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

কেরানীগঞ্জের মধ্য চড়াইল এলাকায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা তিন তলা একটি ভবন পাশের পুকুরে হেলে পড়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত সাত জন।

শুক্রবার সকাল সোয়া আটটার দিকে স্থানীয় জানে আলমের বাড়িটি হেলে পড়ে। এ ঘটনায় আহত ৫ জনকে উদ্ধার করে মিডফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভবনটি হেলে পড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন ভবনের ভিতরে আটকে পরা বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে। সেসময় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ছয়টি ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

স্থানীয়দের অনেকেই উদ্ধার কাজে অংশ নেন। তাদের মধ্যে রিয়াজ ও উজ্জলের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তারা জানান, সকাল ৮ টার দিকে তারা নিজেদের ঘর থেকেই বিকট শব্দ শুনতে পান। তখন পুরো এলাকাজুড়ে সাধারণের চিৎকার শুরু হয়ে যায়।

রিয়াজ বলেন, ‘আমরা আইসা দেখি জানে আলম সাহেবের বিল্ডিং পানিতে পইরা গেছে। আর বিল্ডিংয়ের ভিতর থেকে মানুষ চিল্লাইতাছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আট দশ জন নাইম্মা যাই। আমি উপর দিয়ে একটা জানালার থাই ভাংলাম।

‘ভিতরে দেখি কয়ডা রুমে পানি আর সব জিনিস উল্টাইয়া পাল্টাইয়া রইছে। আমি আমি যেইদিক দিয়া ঢুকছি হেইদিক দিয়া জানে আলম আর তার ছোড পোলারে বাইর করছি। এর কতক্ষন পরেই দেখলাম ফায়ার সার্ভিস আইছে, তারাও আমাগো লগে কাজ করছে।’

উজ্বল বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস খবর পাইয়া আইছে, কিন্তু ৫ জনরে উদ্ধার আমরাই করছি। এক বয়স্ক মহিলা আর একটা বাচ্চা মাইয়্যা আটকা পরছিল। ফায়ার সার্ভিস গ্রিল কাইট্টা বাইর করছে। আমার নিজেরও পা কাইট্টা গেছে।’

কথা হয় ভবনের ভিতরে থাকা জানে আলমের ছোট ছেলের সাদাফ আলমের সঙ্গে। সে বলে, ‘আমিতো ঘুমে, কিচ্ছু টের পাই নাই। মনে হইলো স্বপ্নের মধ্যে ভুমিকম্প হইল, এরপর দেখি আমি পানির মধ্যে। এর কতক্ষণ পরে পাশের বাড়ির লোকেরা আমারে বাইর করল। আর কিছু জানিনা।’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা বাড়িটি খুবই অপরিকল্পিত অবস্থায় নির্মিত। পানির মধ্যে কোনো ধরনের পাইলিং ছাড়াই, চিকন কলাম আর বিমের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে ছিল ভবনটি।

বাড়ীর মালিক জানে আলম বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়া ১০ বছর ধইরা থাকতেছি, আমার সব ইনকাম দিয়া একটু একটু কইরা এই বাড়ী বানাইছি, আমার সব শেষ। সবাই ঘুমে ছিলাম ক্যামনে কি হইল কিচ্ছু বুঝলাম না।’

এমন অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি কেন বানালেন ও ডোবার জায়গা আপনার ব্যক্তিগত কি না আর বাড়ি নির্মাণের আগে যথাযত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্ন রাখলে প্রতিবেদকের সঙ্গে আর কথা বলতে রাজি হননি জানে আলম।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বধর্ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ছয়টি ইউনিট সাড়ে আটটা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তিন ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা শেষে আমরা অভিযান সমাপ্ত করি। ভেতর থেকে আমরা পাঁচ জনকে উদ্ধার করি। তাদের কেউই গুরুতর আহত নয়, তবুও চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

দেবাশীষ বর্ধন জানান, কোনো রকম নিয়ম নীতির তেয়াক্কা না করেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ডোবার ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ভবনটি। এটি পুরোটাই বেআইনি। আশপাশের আরও এমন একাধিক ভবন রয়েছে।

হেলে পড়া ভবনের পাশের তিনটি ভবনকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে সীলগালা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে আশেপাশের একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি বাড়ি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এসি ল্যান্ড সানজিদা পারভীন বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা কিংবা অনুমোদন ছিল কি না সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। অমরা অনিয়ম পেলে পরবর্তীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। ডোবার ওপর নির্মাণ করা আরও কিছু ভবন আমরা চিহ্নিত করেছি, এমন পাঁচটি ভবন আমরা পরিত্যাক্ত করে সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমরা আরও যাচাইবাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

সানজিদা জানান, যে পাঁচটি বাড়ি সিলগালা করা হয়েছে, সেগুলোর ইউটিলিটি (গ্যাস, বিদ্যুত, পানি) সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

হেলে পড়া ভবনের মালিক জানে আলমের তিন সন্তান, দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আর মেয়ে দেশের দুবাই থাকেন। ছোট ছেলে তাদের সঙ্গে থাকেন।

জানে আলম জানান, তার এটা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। ২১ বছর আগে তার বাবা একতলা করেছিল। বাড়ী ধ্বসে পরায় ৪০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর