বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেদেপল্লির মাদক ছড়িয়ে পড়ছে নোয়াখালীতে

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৯:৪১

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাপ, তাবিজ, চুড়ি বা কসমেটিকসের ঝাঁপিতে করে বিভিন্ন এলাকায় মাদক নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন তারা। বিষয়টি স্বীকারও করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি বেদেদের মাদকের কারবার।

বেদেপল্লি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে সাপভর্তি ঝাঁপি, তাবিজ-কবজ নিয়ে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়ানো কিছু মানুষের ভ্রাম্যমাণ জীবন। সাপ খেলা দেখিয়ে কিংবা টোটকা চিকিৎসা করেই আয়-রোজগার চলত তাদের। এখন এই ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠীর দেখা মেলে না আগের মতো।

নোয়াখালী সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে আছে এমন এক বেদেপল্লি। সেখানে বাস প্রায় ৫০০ বেদে পরিবারের।

তবে সেখানে বেদেদের ঝাঁপিতে সাপ নয়, ইয়াবা পাওয়া যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রামে ২০১০ সাল থেকে বসবাস করছেন বেদেরা। তাদের একটি দল তখন থেকেই ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্যের কারবার শুরু করে।

সাপ, তাবিজ, চুড়ি বা কসমেটিকসের ঝাঁপিতে করে বিভিন্ন এলাকায় মাদক নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন তারা। অভিযোগ আছে, বেদেপল্লির কড়ই তোলা, মুন্সি বাজার ও শাজাহান খোনার মসজিদ এলাকায় ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ ও গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হচ্ছে হরহামেশাই। নোয়াখালী সদরও সয়লাব তাদের সরবরাহ করা মাদকে।

বেদেপল্লি যুবসমাজের সভাপতি ও সর্দার ফরহাদ হোসেন জানান, গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও মাদকসেবীর কারণে বেদেপল্লির শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বেদেদের তৈরি হচ্ছে দূরত্ব।

তিনি বলেন, বেদেপল্লির মাদককারবারি ও মাদকসেবীদের নাম ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় লোকজন জানান, বেদে সম্প্রদায়ের সর্দাররা মূলত মাদক বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেদেপল্লির এক জন বলেন, এওজবালিয়ার দুটি ওয়ার্ডে মাদকের বড় কারবারি হলেন সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল, মো. আলমগীর ও টুকু মিয়া। এ ছাড়া মো. নবীন, উম্বর আলী ও মো. রাখালের আছে গাঁজার কারবার।

তারা সাভার, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে মাদকের বড় চালান নিয়ে আসেন বেদেপল্লিতে। সেসব আশপাশের এলাকায় বিক্রি করেন তাদের সহযোগীরা। পরিবারের নারীরাও জড়িত এই কাজে।

বেদেপল্লির নারীরা। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, ‘মাদকদ্রব্য এখন বেদেপল্লিতে সীমাবদ্ধ নয়। তারা পুরো এলাকায় মাদক ছড়িয়ে দিয়েছে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বেদেপল্লি থেকে মাদক কিনে থাকে।’

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বেদে পাড়ার বেশ কয়েকজন মাদক কারবারিকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে অন্যকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করে।’

থানা সূত্রে জানা যায়, মাদকের মামলায় এই বেদেপল্লির ওছমান নামে এক জন চট্টগ্রাম কারাগারে ও আলমগীর নামে এক জন কক্সবাজারের কারাগারে আছেন।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেদেপল্লির মাদক কারবারি তরিকুল হাসানকে মাদকের একটি চালানসহ গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা। এর আগে ২০১৪ সালে মো. মোস্তাক নামে আরেক জনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল বেদেপল্লিতে মাদকের বেচাকেনা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার বিষয়ে ইউপি সদস্য নুরুল বলেন, পুলিশ প্রায়ই বেদেপল্লিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। মাঝে মাঝে মাদক কারবারি ও বিক্রেতাদের ধরেও। তারপরও মাদকের কারবার থামানো যাচ্ছে না।

এওজবালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস জাহের বলেন, ‘বেদেরা সেখানে বসবাস শুরুর পর থেকেই দুই থেকে চার জন বেদে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছিল। এখন ওই পল্লিতে মাদক কারবারির সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমরা গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বেদেপল্লির মাদক বিক্রেতাদের খোঁজখবর নিয়ে থানায় তাদের নাম পাঠিয়েছি।’

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

ওসি বলেন, ‘মাদক কারবারিদের কোনো ছাড় নেই। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর