বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রাশেদ চৌধুরীকে আবার ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রপ্রধান জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের আশাও করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার উচিত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের হাতে ফেরত পাঠানো।’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। এ সময় তিনি এই অনুরোধ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৩৫ বছর পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। এরা হলেন: সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
তবে সাত খুনি রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১০ বছর পর গত বছরের ৭ এপ্রিল হঠাৎ ঢাকায় ধরা পড়েন আব্দুল মাজেদ। ১১ এপ্রিল তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
বাকি ছয় খুনির মধ্যে দুই জনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত সরকার। এদের মধ্যে এ বি এম এইচ নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। ট্রাম্প আমলে এ বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে খানিকটা। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাতে দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও উন্নত করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে দুই দেশই তৎপরতা চালাচ্ছে।’
বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আইসিটি সেক্টরে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করতে পারে। তারা সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ এবং পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করতে পারে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তার জন্য ধন্যবাদও জানান মোমেন। বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার হিসাবে রয়ে গেছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে। পাকিস্তানি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নানা সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিল। এমনকি পাকিস্তান রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়েছিল। তবে রাশিয়া পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ায় তারা আর আসেনি।