বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল বৈধ বিদেশি নাগরিককে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশিদের টিকা পেতে নিবন্ধন করতে হবে পাসপোর্ট দেখিয়ে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কূটনীতিকদের সঙ্গে টিকা নিতে গিয়ে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অবস্থানরত সকলের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, কোভিড-১৯ এমন একটি রোগ, যা এক জন মানুষও টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকলে এই কার্যক্রম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
‘কেবল দূতাবাস বা হাইকমিশন কর্মকর্তা-কর্মচারীই না, সরকার দেশে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে।’
বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবার জন্য টিকা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে, টিকা একটি বিশ্ব সম্পদ। পৃথিবীর সব মানুষেরই এই টিকা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
কূটনীতিক ও এনজি কার্যক্রম ছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে চাকরি বা ব্যবসায় জড়িত কয়েক লাখ বিদেশি। এ ব্যাপারে সরকারের হাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যাটি ১০ লাখের ওপরে।
কূটনীতিকসহ বিদেশিদের টিকাদান বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রাচার আমানুল হক বলেন, ‘মিশন বা দূতাবাসের দেয়া তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন হয়ে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে পাঠানো হবে।
‘আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা দুইটি দিন বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য ঠিক করে দেবো। তারা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে এসে এই দুই দিন টিকা নেবেন।’
টিকা নিতে বিদেশিদের কিভাবে নিবন্ধন করতে হবে তা জানিয়ে আমানুল হক বলেন, ‘এক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাদের বিদেশি কর্মচারীদের তালিকা দিতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সেক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাসপোর্ট দেখিয়ে তারা টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন।
‘টিকার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের মিশনও তাদের নাগরিকদের তালিকা জমা দিতে পারেন। আর যেসব দেশের মিশন নাই তারা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে পারবেন।’
বৃহস্পতিবার কূটনীতিকদের সঙ্গে টিকা নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: নিউজবাংলা
বিদেশিরা বাংলাদেশিদের মতো বিনা মূল্যে টিকা পাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকরা যে দেশে যেমন ব্যবহার পাবেন, সে দেশের নাগরিকদের জন্য আমরা সে ধরনের ব্যবস্থা করব। তবে শেষ পর্যন্ত হয়তো সরকারপ্রধান সবাইকে ফ্রি টিকা দেয়ার ব্যবস্থাই করবেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই রাষ্ট্রাচার জানান, এখন রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার পর্যায়ে যে টিকা কার্যক্রম চলছে তা সিলেক্টিভ প্রোগ্রাম। আগামী সপ্তাহ থেকে গণহারে বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের মিশন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকা দেয়া শুরু হবে।
আমানুল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে দূতাবাস ও মিশনগুলো থেকে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এই কার্যক্রমে সম্ভবত ১২শ কূটনীতিক টিকা নেবেন।’
দেশে গত ২৭ জানুয়ারি পরীক্ষামূলক করোনা টিকা প্রয়োগের পর সাত ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। এর চার দিন পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি কূটনীতিকদের মধ্যে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়।
এদিন বাংলাদেশে কর্মরত জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন দূতাবাসের ৩০ কূটনীতিক টিকা নেন। তাদের সঙ্গে নেন টিকা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনও।
কূটনীতিকদের টিকা দেয়া হচ্ছে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কূটনীতিকদের দ্বিতীয় দিনের মতো টিকা দেয়া হয়। এদিন টিকা নেন যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, নরওয়ে, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের ৪৫ কূটনীতিক। তাদের সঙ্গে টিকা নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
সারা দেশে ১ হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ। নিবন্ধন ছাড়িয়েছে ২৭ লাখ।