ব্যবসায়ীদের পণ্যের কেনা দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে লাভ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভেজাল দিয়ে মানুষের ক্ষতি করা যাবে না।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ওই সময় ভেজাল খাবার বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর আইনের প্রয়োগের ইচ্ছার কথা জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘ভেজালের ব্যাপারে আমি বলব যে, যারা ব্যবসা করতে চায় বা ব্যবসা করছে, দুই পয়সা বেশি কামাই করার জন্য তারা এই ভেজাল দিতে থাকে বা এই পচা গন্ধযুক্ত খাবার ব্যবহার করে।
‘এ ব্যাপারেও…সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ঠিক আছে, আপনাদের যেটা খরচ হয় সেটাই নিয়েন। লাভের অংশটা ওভাবেই হিসাব করেন। কিন্তু এভাবে ভেজাল দিয়ে মানুষের ক্ষতি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন তাদের বোঝানো, তাদের ভেতরে সচেতনতা সৃষ্টি। অন্যদিকে যেটা করতে হবে, কঠোর হাতে এটা দমনও করতে হবে। দুই দিকেই ব্যবস্থা নেয়া একান্তভাবে দরকার।’
‘বিভাগীয় শহরে ফুড টেস্ট ল্যাবরেটরি’
রাজধানীর পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতেও খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যেন টেস্টিং করা যায় সে সুযোগও থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি যে, ১০০টা খাদ্য শিল্পে যে সেফ ফুড প্ল্যন বাস্তবায়ন হচ্ছে, ধীরে ধীরে এটা সারা বাংলাদেশেই করা উচিত। একটা কেন্দ্রীয় ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি হবে। কিন্তু তার সাথে সাথে বিভাগীয়ভাবে করা একান্তভাবে করা প্রয়োজন।
‘আমরা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, এখানে শিল্পায়ন হবে। এখানে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যদি আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে চাই, তাহলে এগুলোর টেস্ট করে সার্টিফিকেট নেয়া একান্তভাবে প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘শুধু খাদ্য না, যেকোনো পণ্য উৎপাদন করি না কেন, সেগুলোর পরীক্ষাগার থাকা দরকার। পরীক্ষা হয়েই কিন্তু বাহিরে যাবে এটা প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। খাদ্যের জন্য এটা খুব দরকার।
‘আজকাল করোনা ভাইরাসের কারণে অনলাইনে অনেক কেনাবেচা হচ্ছে। এমনকি খাবার-দাবারও কিন্তু ঘরে ঘরে ফুড সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে। যারা করছেন, সঠিক খাদ্য কি দিচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে কিন্তু নজরদারি বাড়ানো একান্তভাবে দরকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের ডাক বিভাগকেও আমরা উন্নত করতে চাই, যেন তারা ভালোভাবে পৌছে দিতে পারে।’
‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে অর্থের সমস্যা নেই’
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অর্থের কোনো সংকট হবে না বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি কোনো কিছু করতে গেলে টাকা লাগবে। চিন্তা নাই অর্থমন্ত্রী আমার পাশে আছে।
‘আমি কথাগুলো বলে যাচ্ছি; অর্থমন্ত্রীকে সাথে রেখেই বলে যাচ্ছি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য যা প্রয়োজন আমরা করব।’
এ সময় রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোকে গ্রেডিং স্টিকার দেয়ার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনারা যেমন ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলিকে গ্রেডিং স্টিকার দিয়ে দিচ্ছেন এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ। তবে এটা শুধু রাজধানীতে করলে হবে না। এটা সারা বাংলাদেশে করা দরকার। সেদিকেও সবাই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
‘জনসেবা করতে এসেছি’
ব্যবসা নয়, জনসেবা করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তিনি স্পষ্ট করে বলতে চান, আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি; জনগণের সেবা করতে এসেছে।
‘নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। কারও কাছে হাত পেতে আমরা চলতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছিয়ানব্বই সালে যখন আমি সরকার গঠন করি, দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমি এটা বলব, যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক এটা তারা কখনো চায়নি।
‘আমদানির ওপরই বেশি তাদের আন্তরিকতা ছিল। তার কারণ হলো তাদের নিজেদের কিছু লোক আমদানি করে ব্যবসা করবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খাদ্য নিরাপত্তায় নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেই। আগের আইন পরিবর্তন করে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করি।
‘খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি নিশ্চিতের জন্য আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছি। একসময় আমাদের দেশ থেকে চিংড়ি বা অন্যান্য কিছু রপ্তানি হতো। কিন্তু এতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো এই জন্য যে, এই পণ্যগুলোকে কখনো ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা যেত না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন সরকারে আসি ছিয়ানব্বই সালে তখনও এ সমস্যাটা আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি একান্তভাবে দরকার। তার সাথে চিংড়ি থেকে শুরু করে অন্যান্য মাছ নিয়ে গবেষণা।
‘আমাদের একটা মাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি অনেকগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে করে দিয়েছি যাতে গবেষণা হয় এবং গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দও আমি দিয়েছি। গবেষণা ছাড়া আসলে কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। আজকে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান অথবা খরা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন তরি-তরকারি, ফল, অনেক বিদেশি ফলমূলও এখন এখানে উৎপাদন হচ্ছে।’