মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাক্ষগ্রহণ আটকে গেল।
বুধবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ এই মামলার সাক্ষগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তবে সাঈদীকে অভিযুক্ত করে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের শুনানি আছে জানিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন তার আইনজীবী মুজাদিুল ইসলাম শাহীন ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন দাখিল করা হয়েছে। আমরা আদালতকে বিষয়টি অবহিত করলে আগামী ৭ এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য দিন রেখেছে। আদেশ দাখিল করা না হলে ওইদিন পরবর্তী সাক্ষ্য অনুষ্ঠিত হবে।’
এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রেখেছেন আগামী ৭ এপ্রিল ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলাটি করেন।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ডের এক কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০০৪-০৫ অর্থ বছরের ১৩ লাখ টাকাসহ মোট এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দুঃস্থদের না দিয়ে নিজেদের দলীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ করে আত্মসাৎ করেন।
এই অর্থের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহান জাতীয় বন্ধুজন পরিষদ ভোলার অনুকূলে ৫০ লাখ, কাঠালিয়া মুসলিম এ কে. ইনস্টিটিউটের অনুকুলে ছয় লাখ ৫০ হাজার, মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মসজিদ কাউন্সিল ফর কামউনিটি এডভান্সমেন্টের অনুকূলে ৪৫ লাখ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সভাপতি সাঈদীর ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্র পিরোজপুরের অনুকূলে পাঁচ লাখ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হকের দারুল কারার সোসাইটি, শরীয়তপুরের অনুকূলে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে মামলায়।
দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এই মামলায় গত ১১ জানুয়ারি সাঈদীসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ আসে। সেদিনই সাক্ষী গ্রহণের জন্য তারিখ রাখে আদালত।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির আরও একটি মামলা চলছে।
ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জামায়াত নেতা ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর দেননি।
এই অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট এনবিআর মামলা করে মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে। পরের বছর ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জমা দেয়া হয় আদালতে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। যদিও ২০১৩ সালে এই মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।