কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় প্রচারিত অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচারের ঘটনায় চার জনের নামে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মামলার চার আসামি হলেন আল জাজিরার অনুসন্ধানী দলের সদস্য ও হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে পরিচিত সায়ের জুলকারনাইন সামি, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান ও আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোস্তেফা সওয়াগ।
বুধবার সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক আবেদনটি জমা দেন।
আবেদনের শুনানি শুরু হয় বেলা ১১টার পর। বিচারক বিকেলে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে যড়যন্ত্র করেছে এই চ্যানেলের এই চার জন সাংবাদিক। অবৈধভাবে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে গোটা জাতিকে, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
তিনি আরও বলেন, ‘দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের আইনের ১২৪, ১২৪ (এ), ১৪৯ ও ৩৪ ধারায় মামলার আবেদন দিয়েছি। বুধবার সকাল ১১টায় শুনানি হওয়ার কথা আছে।’
১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করে আল জাজিরা। এ নিয়ে শুরুতে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সোমবার রাতে আইএসপিআর ফের প্রতিবাদ জানায়। তাদের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘পেশাগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ, সবার কাছে অতি গ্রহণযোগ্য সেনাবাহিনী প্রধানকে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া আল জাজিরা কর্তৃক অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত করার অপপ্রয়াস, যা সেনাবাহিনী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনটি সেনাসদরের নজরে এসেছে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘তথ্যচিত্র আকারে পরিবেশিত প্রতিবেদনটিতে আল জাজিরা কর্তৃক বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে অসংখ্য ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।’
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সেনাবাহিনী প্রধানকে বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের দরবারে বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ও হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্যান্য অসত্য, বানোয়াট, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও অসমর্থিত তথ্য সংযুক্ত করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে দেখানো ইসরাইল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পাইওয়্যার কেনা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেনাপ্রধানের ভাইকে সম্পৃক্ত করে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবাদলিপিতে।
আল জাজিরার তথ্যচিত্র নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অনুষ্ঠানে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যা কিছু আপনারা শুনছেন, এগুলোর কোনো প্রমাণ...এগুলো হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে কাটপিস, অন্যান্য জিনিস সন্নিবেশিত করে তারা এগুলো করতেই পারে। তাদের এই উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে জেনারেল আজিজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কিছু করার হয়তো থাকবে না। আমি নিশ্চিত সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
তথ্যচিত্রে ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ছিল, যেটা থেকে ইতিমধ্যে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সে অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল। আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম।
‘এখানে আল আজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। আমি যদি বলি, সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না কোনো মামলা ছিল। যে মামলাটা ছিল সেটা থেকে আগেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’