গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় বুধবার ঘোষণা করবে হাইকোর্ট।
রায়ের জন্য মামলাটি সংশ্লিষ্ট কোর্টের কার্যতালিকার এক নম্বরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ।
মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রায় ঘোষণা শুরু হবে। রায়ের জন্য এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
বুধবার বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেবে। ভাষার মাস উপলক্ষ্যে রায়টি বাংলায় দেবেন বলে গত ১ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
সেদিন মামলায় সব পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন রাখে আদালত।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের অসমাপ্ত বক্তব্যের জন্য ১ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেয়া হয়। ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পরে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে দেয় আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নাসির উদ্দিন ও মোহাম্মদ আহসান।
২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির সর্বোচ্চ শাস্তি দেন। আদালত গুলি করে প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।
এ মামলার প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের আরেক মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল।
মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াশিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রায়সহ মামলার সব নথি ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে আসে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পেপারবুক তৈরি হলে হাইকোর্টে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ কয়েকবার পুনর্গঠন হওয়ায় মামলাটির শুনানি বেশ কয়েকবার পিছিয়ে যায়।
২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন একটি মামলা করেন।
মামলায় ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর মামলার দীর্ঘ পরিক্রমায় আসে প্রথম রায়।