বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা-সিলেট চার লেনে ব্যয় কেন বেশি

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:০৫

কিলোমিটারপ্রতি খরচ হবে ৮২ কোটি টাকা। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পেও খরচ হয় প্রতি কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা।

এবার দেশের অন্যতম দীর্ঘ মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। ২০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হবে ৮২ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে অন্য যেসব চার লেন সড়ক তৈরি হয়েছে, তাতে গড়ে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। তাহলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে খরচ এতো বেশি কেন?

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছৈ। এখানে বেশি ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।

প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে এডিবি। বাকি ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে।

চার লেনের সড়কটি নির্মাণে পরামর্শক, যানবাহন কেনা, মাটির কাজ, ব্রিজ, কালভার্ট, ফ্লাইওভারসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের তদারকিতে পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে মঙ্গলবার। একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তরা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এতে করে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণ হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ ধরনের সড়ক নির্মাণে খরচ যে বেশি, তা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অভিযোগ করেছে।

একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দাতাদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিতে গেলে নানা ধরনের শর্ত দেয়া হয়। এসব শর্ত পূরণ করতে গেলে খরচ তো একটু বেশি পড়বেই।

এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে খরচ হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পেও খরচ হয় প্রতি কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়কে খরচ হয়েছে ২২ কোটি টাকা।

রংপুর থেকে হাটিকুমরুল নির্মাণাধীন চার লেনে খরচ পড়ছে ৫৫ কোটি টাকা। সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত চার লেনের সড়কটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৬৪ কোটি টাকা। তাহলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে খরচ কেন ৮২ কোটি টাকা?

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে অস্বাভাবিক খরচের আলোচনা দীর্ঘদিনের। অনেক ক্ষেত্রে যে ব্যয় ধরা হয়, তা অতিরঞ্জিত ও অযৌক্তিক। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ কমিয়ে যৌক্তিক করা উচিত বলে পরামর্শ দেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ অন্য মহাসড়কগুলো প্রচলিত বিটুমিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নতমানের পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করা হবে। তাই এই প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি খরচ বেশি হবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, বিটুমিনের জন্য রাস্তা তৈরির খরচ খুব একটা বাড়ে না। বেশি খরচ হয় ভূমি অধিগ্রহণ ও সেতু নির্মাণে। মোট ব্যয়ের ৪৫ শতাংশই চলে যায় এসব কাজে।

তিনি আরও বলেন, এটি এক্সপ্রেসওয়ে হলে খরচ বাড়তে পারে। পৃথিবীর সব দেশেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনেক টাকা খরচ হয়।

সড়ক নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় বেশি হওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খাত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৭ সালে। চীন সরকার এ প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ জন্য চায়না হারবারকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।

কিন্তু সাবেক সড়কসচিব নজরুল ইসলামকে ঘুষ সাধার অভিযোগে চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত করে সরকার। ফলে এই প্রকল্প থেকে চীনকে বাদ দেয়া হয়।

পরে এডিবি অর্থায়ন করতে সম্মত হয়। নানা জটিলতায় গত তিন বছর কোনো অগ্রগতি না হওয়ার পাশাপাশি দর পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

এ বিভাগের আরো খবর