বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্ত্রণালয়ে সাক্ষ্য দিলেন নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৭:৪৫

গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় হানা দিয়ে তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকিসহ ডিসি অফিসে এনে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তের অংশ হিসেবে নির্যাতিত আরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুর সাক্ষ্য নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে রুদ্ধদ্বার কক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলি কদরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সাক্ষ্য নেয়। এ প্রক্রিয়াটিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস’ বলে উল্লেখ করেছে।

গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় হানা দিয়ে তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকিসহ ডিসি অফিসে এনে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

এরপর অধূমপায়ী আরিফের বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তার এক দিন পর ১৫ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে কুড়িগ্রামের তখনকার জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দীন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

একই সঙ্গে এ ঘটনায় বিভাগীয় অভিযোগ দায়ের হয় এবং ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়।

তারই জের ধরে মঙ্গলবার সাক্ষ্য নেয়া হয় আরিফ ও তার স্ত্রীর।

কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সাক্ষ্য দান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আরিফ। সাক্ষ্য প্রদানের সময় অভিযুক্ত সুলতানা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।

আরিফ বলেন, ‘আমি সে রাতের বর্ণনা দিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন আমাকে জেরা করেছেন। কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তিনি টেনে আনার চেষ্টা করেছেন। আমাকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস তিনি চালিয়েছেন। কিন্তু আমি তার প্রত্যেকটি প্রশ্নের সদুত্তর দিয়েছি।’

অভিযোগসংক্রান্ত নয় এমন বিষয় তিনি টেনে এনেছেন বলে অভিযোগ করেন আরিফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি তদন্তে সম্মতিও দিয়েছি। আমি বলেছি, আপনারা চাইলে তদন্ত করে দেখতে পারেন।’

আরিফ অভিযোগ করেন, সুলতানা পারভীন প্রসঙ্গ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তাকে বারবার বলছিলেন উনি (আরিফ) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি প্রশ্ন করেন, অন্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা যাবে না। তদন্ত কমিটি যেহেতু তদন্ত করছেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন আসলে তিনি কতটুকু জড়িত।'

তদন্ত কমিটির মনোভাব কেমন দেখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও আমি শুনেছি, যদিও আমি কোনো অফিশিয়াল ডকুমেন্ট পাইনি, অভিযুক্ত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অলরেডি পোস্টিং দেয়া হয়েছে। তারা তো আসলে অভিযানে অংশ নিয়েছিল। দলবদ্ধভাবে আমার উপর নির্যাতন করেছে। তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে। ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পোস্টিং দেয়ার বিষয়টি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটুকু বুঝতে পারি, এদেরকেও ছাড় দেয়া হবে।’

সাক্ষ্য দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তারা (তদন্ত কমিটি) আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন ঘটনা কোন সময় ঘটেছে? কয়টার সময় হয়েছে? আমি একজন নির্যাতিত মানুষ। ওই সময় আমি আহত। ভয়াবহ রকম আহত। আমি কি আসলে তখন ঘড়িতে দেখতে গিয়েছি যে কয়টার সময় হয়েছে? আমাকে কারাগার থেকে ঠিক কয়টার সময় বের করা হলো, কয়টার সময় আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে সুলতানা পারভীন ফোন দিলেন – এই সময়গুলো আসলে আমার বলে দেয়া সম্ভব না। আমি বলেছি, আমি সময় কিভাবে আইডেন্টিফাই করে দেব। ওই সময় তো আমার ঘড়িও ছিল না। কিন্তু তারা আমাকে বলেছেন, আমাকে সময় বলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সংবাদ প্রকাশ করার পরে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সুলতানা পারভীন আমার ওপর যে বিভিন্ন সময়ে প্রেশার ক্রিয়েট করছিলেন, কবে কোন তারিখে কী ঘটনা ঘটেছে সেটাও তারা জানতে চেয়েছেন। কিন্তু এটা তো আসলে মেমোরাইজ করার বিষয় নয়।’

তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়ের করা মামলা কোন অবস্থায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রিট পিটিশন করার পর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। সেই রিটের এখনও শুনানি হয়নি, নিষ্পত্তি হয়নি। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না সেটার কী হলো।’

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের একটি পুকুর সংস্কার করে নিজ নামে সুলতানা সরোবর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই সময়ের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। সেটা নিয়ে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। এটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা হলে প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল ইসলাম।

আরিফ বলেন, ‘আমি সেই প্রতিবেদনটা করেছি মাত্র। কিন্তু এই ঘটনায় তিনি এতোটাই সংক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, আজকের জেরাতেও এই সংক্ষুব্ধ হবার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তিনি আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছেন: আপনি কি কুড়িগ্রামের মাথা হয়ে গিয়েছেন? কেউ নিউজ করল না আপনি করলেন কেন?’

মামলা তুলে নিতে এবং ফয়সালা করতে তাকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল আরিফের কণ্ঠে।

তিনি বলেন, ‘ইভেন আমি যাতে সাক্ষ্য প্রদান করতে না আসি, সে বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আমি আসলে একটু আগেও বলেছি, লড়াইটা আমাদের গোটা বাংলাদেশের সংবাদকর্মীদের লড়াই। ব্যক্তিগতভাবে আমি হয়তো দমে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি যদি হেরেও যাই, তবু আমি এর শেষটা দেখতে চাই।’

পরে তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলি কদর বলেন, ‘ভিকটিম ও অভিযুক্ত, দুই পক্ষের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত যদি নিজে থেকে আরও সাক্ষ্য দিতে চান, তা নেয়া হবে। এবং কমিটি প্রয়োজন মনে করলে আর কারও সাক্ষ্য নেয়ার দরকার আছে কি না, তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’

একই ঘটনায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের দায়ের করা ফৌজদারি মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যে মামলাটি করেছি, আসলে ১১ মাস হয়ে গেল। ভয়াবহ একটা নির্যাতন করার পর আমি মামলা করেছি। মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি।’

এ বিভাগের আরো খবর