বিজ্ঞানলেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অপর আসামি শাফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও করেন।
জিয়া ছাড়া মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও আরাফাত রহমান সাজ্জাদ ওরফে শামস্।
মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক। অপর চার আসামি কারাগারে।
একই আদালত গত ১০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দ্বীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়।
কয়েকটি তদন্ত সংস্থার হাত ঘুরে তদন্ত এবং বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে ছয় বছর পর এই বিচারের রায় পড়ে শোনান বিচারক।
এর আগে কারাগারে আটক থাকা চার জঙ্গিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় সকাল ৯টার আগে সদরঘাটের বিচারিক আদালতে আনা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামিদের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ভবনের আট তলায় সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় নিয়ে আসেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা।
গত ২১ জানুয়ারি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করে ট্রাইব্যুনাল।২৭ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা তাদের আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
দুই আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি। ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ ঠিক করে।
সন্ত্রাস দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের রায় আমরা আশা করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিগণ অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে, তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আমরা আদালতে উপস্থাপন ও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এম নজরুল ইসলাম ও খাইরুল ইসলাম লিটন আদালতে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণ হয়নি।
তাদের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কম্পিউটার প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি ও রাজু ভাস্কর্যসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে জঙ্গিরা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা চাপাতির আঘাতে তার হাতের একটি আঙুল হারান।
এ হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশে অভিজিৎ রায়সহ সব হত্যার বিচারের দাবিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হয়।