নির্বাচন কমিশনে ভিন্নমত দিয়ে বারবার আলোচনায় আসা কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, তিনি দেশের প্রয়োজনে পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন। অবশ্য পদত্যাগ করবেনই-এটি বলেননি তিনি।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ‘ইসির পঞ্চম বর্ষের প্রারম্ভে আমার বক্তব্য’ শিরোনামে এক লিখিত বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন এই কমিশনার।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে যদি লাভ হয়, দেশের যদি কোনো উপকার হয়, তাহলে আমি যে কোন মুহূর্তেই পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।’
কমিশনের অবস্থানের বাইরে গিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, সব পক্ষ সমান সুযোগ পাচ্ছে না।
কমিশনের আরও নানা সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছেন মাহবুব তালুকদার। এমনও বলেছেন, তার বক্তব্য ও অবস্থান কমিশনে গুরুত্ব পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কেন কমিশনে আছেন- এমন প্রশ্ন ছিল তার কাছে।
এখন পর্যন্ত তিনবার পদত্যাগের অনুরোধ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কতবার পদত্যাগ করব? সেটাও একটা প্রশ্ন।’
গত চার বছর কমিশন কী দায়িত্ব পালন করেছে, সে বিষয়ে আত্মবিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘প্রায় সব নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সকল দাবি জনগণের উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
‘কেবল রাজনৈতিক দল নয়, নীরব জনগোষ্ঠীর অশ্রুত ভাষা শ্রবণের প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন।’
নির্বাচনগুলো ‘এককেন্দ্রিক’ হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার। বলেন, ‘এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না।’
‘নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে’- এমন মন্তব্যও করেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়। নির্বাচন অর্থ অনেকের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে বাছাই। কিন্তু সে অবস্থা আজকাল পরিলক্ষিত হয় না। প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কি এখন পূর্বে নির্ধারিত?’
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে এই কমিশন এরই মধ্যে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ আছে তাদের।
মে মাসে শুরু হতে যাওয়া দলীয় প্রতীকের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন মাহবুব তালুকদার।
বলেন, ‘প্রাণহানীর অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার পথ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।’