ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও কেন তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করা যাচ্ছে না, সেটা জানালেন ঢাকায় দিল্লির দূত বিক্রম দোরাইস্বামী।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, তারা বাংলাদেশকে ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে আগ্রহী। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেঁকে বসায় এটা করা যাচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন ভারতীয় দূত।
গত এক যুগে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে স্থল সীমানা চুক্তি সই হয়েছে। ১০ হাজার একর ভূমি বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ।
জলসীমানা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের দেয়া রায় ভারত মেনে নেয়ায় বাংলাদেশ বিপুল জলরাশি পেয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
এসব ঘটনার মধ্যেও দুটি ঘটনা এখনও দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হিসেবে রয়ে গেছে। একটি হলো তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা।
সীমান্ত হত্যা অবশ্য এক দশক আগের তুলনায় বেশ কমেছে। আর এই বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সরকার নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছে। ভারত অঙ্গীকার করেছে, তারা এই হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করছে।
তবে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে যে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটি এখনও হয়নি।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। পরে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিকবার এই চুক্তি করার বিষয়ে আশ্বাস দেয়।
২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তার সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।
বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আমরা রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি, তাদের কারণে চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিস্তা নিয়ে ভারত খুব দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটি শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় নয়, রাজ্য সরকার এটির সঙ্গে খুব বেশি জড়িত।’
গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সামিটেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তিস্তা সমস্যার সমাধান না করতে পারায় শেখ হাসিনার কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন মোদি।
সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার নেতৃত্বে দুই দেশের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) শীর্ষক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ঢাকা তিস্তা চুক্তি সমাধানে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করে।
জবাবে নয়াদিল্লি ঢাকাকে আগের মতো চুক্তি সমাধানে আশ্বস্ত করে। ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তার বিষয়ে জানানো হয়, তিস্তা চুক্তি সমাধানের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে ছয়টি অভিন্ন নদীর সমাধানের বিষয়ে প্রথম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।