বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন ভাতা ২০ হাজার টাকা : প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৩:০২

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি করতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু আমরা এটা করব। মুক্তিযোদ্ধারা ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। বীরশ্রেষ্ঠ বা বীর উত্তম তাদের ভাতাটা আলাদা থাকবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন ভাতা ২০ হাজার টাকা করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভার সমাপনীতে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর মাসিক ৩০০ টাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু করি। এখন ভাতা শুরু হয় ১২ হাজার টাকা থেকে। কিন্তু আমি জানি এটা কিছুই না।

‘এ জন্য আমরা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিচের ভাগের যে স্লটগুলো রয়েছে, সেগুলোকে একটাতে নিয়ে আসা যায় কি না। আমরা ভাতা শুরু করব ২০ হাজার টাকা থেকে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি করতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু আমরা এটা করব। মুক্তিযোদ্ধারা ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। বীরশ্রেষ্ঠ বা বীর উত্তম তাদের ভাতাটা আলাদা থাকবে।

‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর অনেক বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর করে দিয়েছি। যারা দেশের জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট করে থাকবেন, অন্তত আমি সরকারে থাকতে এটা হবে না।’

বর্তমান ব্যবস্থাপনায় একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে পান ৩০ হাজার টাকা আর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার পান ২৫ হাজার টাকা। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পান ১২ হাজার টাকা করে।

খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবার পান মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তম ২৫ হাজার, বীর বিক্রম ২০ হাজার ও বীর প্রতীক ১৫ হাজার টাকা করে পান।

ট্রাস্টি বোর্ডের সভা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা জিটুপি পদ্ধতিতে প্রদানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করবেন, বেঁচে থাকতে তা হবে না’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি বেঁচে থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট করে বাঁচবেন, এমনটা হতে দেবেন না তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করে খাবেন, ঘর থাকবে না; তাদের ছেলেমেয়েরা অবহেলিত থাকবে, অন্তত আমি যত দিন বেঁচে আছি এটা হতে পারে না। এটা আমি মানতে পারি না।

‘কারণ তাদের অবদানেই তো আমাদের স্বাধীনতা। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিভিন্ন এলাকায় যারা বিত্তশালী আছেন, তাদেরও আমি অনুরোধ করব, বিত্তশালী কখনও হতে পারতেন না যদি মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন না করতেন।'

এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসতে বিত্তশালীদেরও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাদের জীবনটা যেন ভালো হয় সে ব্যবস্থাটাও নেবেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমার যা করণীয় অবশ্যই আমি তা করে যাচ্ছি আর করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বীরশ্রেষ্ঠ তাদের পরিবারকে আমরা রেশনসামগ্রী দেয়া শুরু করেছি। অনেকেই যাদের ঘরবাড়ি ছিল না, আমি নিজের উদ্যোগে তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি।’

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা আগে চাকরি করতেন বা সামরিক বা অন্যান্য বাহিনীতে ছিলেন, তারা একসময় ভাতা পেতেন না।

‘আমরা এখন সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষ সকল মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত যারা এবং শহিদ পরিবার সবাইকে এই কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তাকারী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক বিদেশি বন্ধু সহযোগিতা করেন। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে আমি উদ্যোগ নিই যারা আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে একটা সম্মান দেয়া।

‘ভারতের সেনা সদস্যরা জীবন দিয়েছিলেন, তাদেরও আমরা সম্মাননা দিয়েছি। বাঙালি জাতি আমরা কারও অবদান ভুলে যাই না। দুঃসময়ে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাদের শরণার্থীদের যারা স্থান দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে, তাদের সবাইকে সম্মান দেয়া আমাদের কর্তব্য। সেভাবেই আমরা সম্মাননা দিয়েছি।’

প্রতি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান তুলে ধরতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি তিনতলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষা করা বা যেসব জায়গায় গণহত্যা হয়েছে সে স্মৃতিগুলো রক্ষা করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স গড়ে তুলছি। এই কমপ্লেক্সের জন্য জমি আমরা নিজেরাই দিচ্ছি।

‘এখানে একটা করে ছোট জাদুঘরের মতো থাকবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা হবে। আর যারা এখনও মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন, তারা তাদের গল্প, তারা কিভাবে যুদ্ধ করলেন, সেটা আমাদের শিশুদের কাছে জানানো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রায় ৪৭০টি উপজেলায় এই কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে। আর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের যে স্মৃতিগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

‘তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা এবং সেগুলো ওই অঞ্চলের মানুষ যেন জানতে পারেন যে ওই অঞ্চলের একজন বীর যে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সব স্থান আমরা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’

১৫ ফেব্রুয়ারি কলঙ্কজনক অধ্যায়

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি। আমি একটু স্মরণ করাতে চাই, ১৯৯৬ সালে এ দিন বাংলাদেশে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল।

‘পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সে সময় এ দেশের মানুষের শুধু যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করেছে তা নয়, মানুষের ভাতের অধিকারও কেড়ে নিয়েছিল। বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নিয়েছিল।'

তিনি বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি তারই স্ত্রী খালেদা জিয়া একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কোনো রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করেনি, সে কয়েকটি দল গঠন করে করেছিল, দুই পারসেন্ট ভোটও পড়েনি।

‘সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ডিপ্লয় করে দিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে। ভোট চুরি করে আবার সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তা মেনে নেয়নি। তীব্র আন্দোলন হয়। সে আন্দোলনের মধ্যে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। সেদিন আন্দোলনে অনেক নেতা-কর্মীকেও জীবন দিতে হয়েছে।

‘আমরা আজকে যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করত পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারছি, এর পেছনে অনেক ত্যাগ রয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর