রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় তার স্বামী আসিফ প্রিসলিকে জামিন দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এর আগে মামলাটির পুনর্বিচার করতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আসিফ। এটি গ্রহণ করে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই জামিন দেন।
এদিন আদালতে আসিফের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দাস দেবনাথ।
জামিনের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দাস দেবনাথ।
কত দিনের জামিন দিয়েছেন আদালত জানতে চাইলে আসিফের পক্ষের আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আপিল শুনানি সাপেক্ষে তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। মামলার বাকি আসামিরা জামিনে আছেন। ফলে তাকে জামিন দিয়ে বাকিদের লিভ টু আপিলের সাথে একীভূত করে দিয়েছে। সবগুলোর শুনানি একসঙ্গে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্দশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ওয়াহিদা সিফাত। ২০১০ সালে আসিফ প্রিসলির সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এর পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালে ২৯ মার্চ শ্বশুর বাড়িতে মারা যান সিফাত। তখন তার পরিবার থেকে স্বামী আসিফের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় ।
এর ভিত্তিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিফাতের ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় সিফাত আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু ওই বছরের ২ এপ্রিল সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
এরপর আদালতের নির্দেশে সিফাতের লাশ কবর থেকে তুলে রংপুর মেডিক্যালে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এরপর পুলিশ তদন্ত শেষে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সিফাতের স্বামী আসিফ প্রিসলি, আসিফের বাবা মো. রমজান হোসেন, মা নাজমুন নাহার ও প্রথম ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানকে আসামি করে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয়।
মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর এই আদালতেই ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে একমাত্র আসিফকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় আদালত।
রায়ে অন্য আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসিফ এবং বাদীপক্ষ হাইকোর্টে আলাদা আপিল করে। বাদীপক্ষের আপিলটি ছিল দণ্ডিত আসিফের সাজা বাড়াতে। আর আসিফ আপিল করেন খালাস চেয়ে।
উভয় পক্ষের আপিল শুনানির পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে দণ্ডবিধির পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আইনে তিন মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া তিন আসামিকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
পাশাপাশি তিন আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে এবং তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্ট আদালত যেন তাদের জামিন আবেদন বিবেচনা করে সেটিও বলে দেয়া হয়।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন আসিফ প্রিসলি। ওই আবেদনের শুনানির পরই আপিলের অনুমতি দিয়ে তাকে জামিন দেয় সর্বোচ্চ আদালত।