বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
জামুকার সিদ্ধান্তের পর বিএনপির টানা প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যে শনিবার এ কথা বলেন মন্ত্রী। তবে সরকার এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘শাহ আজিজুর রহমান পাকিস্তানের ডেপুটি লিডার হিসেবে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে ওকালতি করেছেন। জিয়াউর রহমান তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুতরাং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে তার খেতাব বাতিল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন হাছান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের এক জন ছিলেন। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু সরকার জিয়াকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে।
তবে হাছান মাহমুদের দাবি, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। তার কাছে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার পাকিস্তানের পক্ষে তার ভূমিকার জন্য প্রশংসা করে চিঠি লিখেছিল।’
এর আগে সকালে জামুকার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির বিক্ষোভে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। পুলিশের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ-ধাওয়া হয়। সেখান থেকে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার জামুকা বৈঠকে বসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে।
প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশ ঘিলে ছিল পুলিশের কড়া সতর্কতা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সেখানে জামুকার সদস্য সংসদ সদস্য শাহাজান খান বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছেন। তাই তারও খেতাব বাতিল করা হোক।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে জিয়াউর রহমানের নাম আসেনি। তবে তার আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ফারুক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এই হত্যার পরিকল্পনা জিয়াউর রহমান জানতেন। আর তিনি তাদেরকে এগিয়ে যেতে বলেছিলেন।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি খুনিদের বিচার ঠেকাতে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করেছেন।
জামুকার মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেল জানিয়েছিলেন, ‘জামুকার বৈঠকে সদস্যরা বিস্তারিত আলোচনার পর এই পাঁচ জনের খেতাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন আমরা প্রস্তাব আকারে তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
জামুকার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে জিয়াউর রহমানসহ খেতাব বাতিল হওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও তাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগসুবিধা পাবে না।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীদের পূনর্বাসন করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন হাছান মাহমুদ।