বিএনপির সমাবেশের সময় সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের হাতে আটক দলীয় কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
এই ঘটনায় বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রশংসায় ভাসছেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাপুত্র। তাকে সাহসী এবং প্রকৃত নেতা উল্লেখ করে পোস্ট দিচ্ছেন বহুজন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে হাঙ্গামা হয়।
সমাবেশের শেষের দিকে প্রধান অতিথি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তৃতা দেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে তৈরি হয় সংঘর্ষ।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। নেতা-কর্মীরা তখন পুলিশের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
শুরু হয় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। একপর্যায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়া ইশরাক ও তার কয়েকজন কর্মীকে লাঠিপেটাও করে পুলিশ।
ইশরাক ও তার কয়েকজন কর্মীকে লাঠিপেট করে পুলিশ।
তখন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লোহার গ্রিলের একটি অংশ দিয়ে ভেতরের দিকে পড়ে যান ইশরাক।
বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে লোহার গ্রিলের ফাঁক গলে অপর পাশ দিয়ে দেখতে পান, তার দলের এক কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে প্রিজন ভ্যানে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মীরা।
ওই কর্মী ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৩৯ নং ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকাশ চৌধুরী ইমন। আঘাতে তার কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
সেখানে তখন পুলিশের ছড়াছড়ি, বিএনপির কেউ নেই। কিছুক্ষণ আগে পিটুনি খাওয়া ইশরাকের পক্ষে সেখানে যাওয়া ছিল বিপজ্জনক। কিন্তু তিনি তাতে গা করেননি।
বিএনপি নেতা দৌড়ে যান পুলিশের কাছে। একাই ছাত্রদল নেতাকে ধরে টান দেন।
তার দেখাদেখি সঙ্গে থাকা কয়েকজন কর্মীও দৌড়ে আসেন ঘটনাস্থলে। তারা একযোগে চলে আসার পর পুলিশ বাধা দেয়নি। ছাত্রদল নেতাকে নিয়ে ইশরাক আবার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে প্রেস ক্লাবে ঢুকে যান।
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ কিছু করেছি বলে মনে করছি না। আমার জীবন যদি চলেও যায়, আমার নেতা-কর্মীকে অনিরাপদ রেখে আমি যেতে পারি না।
‘আমার কাছে নেতা হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্বের চাইতে বড় নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে হয়।’
ওই কর্মীকে আগে থেকে চিনতেন কি না, এমন প্রশ্নে ইশরাক বলেন, ‘সে আমার পাড়ার ছেলে। আমাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে এসেছে। তাকে এভাবে ফেলে রেখে তো আমি যেতে পারি না।’
ওই সমাবেশে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের পর পুলিশ আটক করেছে বিএনপির ১৭ জনকে।
পুলিশের হাতে আটক দলীয় কর্মীকে উদ্ধার করছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বিএনপি সমর্থকদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে। একটি পেজে ভিডিওটি পোস্ট করে এক কর্মী লেখেন, ‘ইশরাকের মতো এ রকম নেতা আরও তিন জন থাকলে বিএনপি আরও আগেই ক্ষমতায় আসত।’
এ রকম আরও অনেক প্রশংসায় ভাসছেন খোকাপুত্র ইশরাক।
সম্প্রতি পুরান ঢাকায় স্কুল থেকে জিয়াউর রহমানের নাম পাল্টানোর পর নতুন নাম কালি দিয়ে মুছে দিয়েছেন ইশরাকের কর্মীরা। সেদিন এই কাজের নেতৃত্ব দেন তিনি।
গত ৩০ নভেম্বর বংশাল মোড়ে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে মোগলটুলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
২০০৬ সালের ২৫ মার্চ জিয়াউর রহমানের নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে সময় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। নগর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি স্কুলের নাম পাল্টে করেছে ‘পুরানা মোগলটুলী উচ্চবিদ্যালয়’।
সেদিন সকালে বংশাল মোড়ে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে মোগলটুলী এলাকায় বিদ্যালয়টির সামনে যান। সেখানে নেতা-কর্মীরা স্কুলের ফটকে থাকা নাম কালি দিয়ে মুছে দেন। পরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও ইশরাক হোসেন নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যান।