এক্সিম ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেপ্তারের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পাওয়া সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদারকে মুক্তির পরদিনেই দেখা গেল হুইল চেয়ারে।
শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদারকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে রাজধানীর রায়েরবাজারে সিকদার উইমেনস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আলোচিত এই শিল্প উদ্যোক্তাকে দেখা যায় হুইল চেয়ারে।
জয়নুলের দুই ছেলের মধ্যে রন দেশে এসেছেন শুক্রবার সকালে। বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। দুপুরের পর আদালতে নেয়া হলে বাবার জানাজায় অংশ নেয়ার কথা বলে জামিন আবেদন করেন তার দুই আইনজীবী।
পুলিশ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখার আবেদন করেছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেননি। আর ১০ মার্চ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দেন বিচারক।
মুক্তি পেয়ে হেঁটেই আদালত থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠেন রন।
পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রনর বাবা জয়নুলের মরদেহ তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান সিকদার মেডিক্যালে আনা হয়।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশিষ্টজন ছাড়াও আসে হাজার তিনেক মানুষ।
রন সেখানে যান বেলা একটার দিকে। সাদা রঙের যে গাড়িতে করে তিনি আদালত থেকে বাসায় ফিরেছিলেন, সেই গাড়িতে করেই যান হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই যান হাসপাতালের ভেতরে।
গাড়ি থেকে নেমে রন সিকদার হেঁটেই যান হাসপাতালের ভেতরে
বেলা দুইটার পর হাসপাতাল মাঠ প্রাঙ্গনের জানাজার স্টেজে দেখা যায় অন্য চিত্র। স্টেজের এক কোণে তিনি ও তার মা দুইজনকেই হুইল চেয়ারে দেখা যায়। যতক্ষণ তিনি সেখানে ছিলেন, হুইল চেয়ারেই বসা অবস্থায় ছিলেন।
একবার তিনি উঠে এসে তার বাবার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আবার হুইল চেয়ারে বসে পড়েন।
রনর কী অসুস্থতা, সেটা জানা যায়নি এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো কথা না বলায়।
রনর বোন সংরক্ষিত নারী আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য পারভীন হক সিকদার স্টেজে দাঁড়িয়ে সবাইকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার বাবার জানাজায় যোগদান করেছেন। এ জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
তবে রন ছিলেন একেবারেই চুপচাপ। তিনি কোনো কথাই বলেননি।
বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি রন সিকদারকে
জামিন পেয়ে রন আদালত বা তার বাসাতেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
তবে রনর মামাত ভাই শেখ জহুরুল হোসেন শুক্রবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাগারাগির মাথায় তাকে একটি মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল। আজকে ছুটির দিনে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে তাকে জামিন দিয়েছে স্পেশাল কোর্ট।’
রন ও দিপুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
রনর বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলা আছে। এই মামলায় তার ভাই দিপু হক সিকদারও আসামি। তবে তিনি দেশে আসেননি।
গত ১৯ মে করা অভিযোগ, তারা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি ঘরে বন্দি করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
মামলায় বলা হয়, সিকদার গ্রুপ এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চেয়েছিল। এরপর ব্যাংকটির দুই কর্মকর্তা ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শনে দেখা যায়, সিকদার গ্রুপের এমডির দাবির তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম। তখন এ নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
মামলায় বলা হয়, দুই ভাই তাদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি সাদা কাগজে সইও নিয়েছেন।
সিকদার গ্রুপের ব্যবসা আছে ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত নানা খাতে।
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক সিকদার। এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।