বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উকিলেরা কালো কোট পরেন কেন?

  •    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:৪৫

ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এ প্রথা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কেউ কেউ এতে পরিবর্তন চান। বেশির ভাগই চান না।

আদালতে আইনজীবীরা সাদা শার্টের ওপর কালো কোট ও কালো গাউন পরেন। এই পোশাকের বাইরে অন্য কোনো পোশাক তাদের পরতে দেখা যায় না। বিচারকেরাও পরেন কালো কোট।

এ পোশাক আইন ও বিচার পেশার সঙ্গে জড়িতদের জন্য কতটা বাধ্যতামূলক? কোথা থেকে এলো এ পোশাক? দুনিয়ার সব দেশের আইনজীবীরাই কি কালো কোট পরেন?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট এ পোশাক বা ড্রেস কোড মানার বাধ্যবাধকতা আছে আইনজীবীদের। আদালতের কার্যক্রম সংক্রান্ত অন্তত তিনটি বিধান বা আচরণবিধিতে এই ড্রেস কোডের কথা বলা আছে। ফলে এটি নিছক প্রথা নয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের সব দেশেই (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা) শত শত বছরের পুরনো এই ড্রেস কোড মানার বাধ্যবাধকতা আছে। বিভিন্ন আইন ও রীতিনীতি যুগের প্রয়োজনে নানাভাবে সংশোধন হলেও আইনজীবী ও বিচারকদের পোশাকের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিচারব্যবস্থা প্রচলিত, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল ব্রিটিশ শাসন থেকে। তাদের রেখে যাওয়া ড্রেস কোডেই চলছে আধুনিক বিচারব্যবস্থা।

কিন্তু আইনজীবীরা কি এর পরিবর্তন চান নাকি তারা এ রীতি বা প্রথা মানার পক্ষে?

কথা বলে দেখা গেছে, এ ব্যাপারে আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সময়ের পরিবর্তনে এ প্রথায় বদল আনতে আপত্তি নেই অনেকেরই। তবে কেউ কেউ বলছেন, কালো পোশাক পরিধানের মাধ্যমে আইনজীবীদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি হয়েছে।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো পোশাকের সঙ্গে ন্যায়বিচারের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে পোশাকের পরিবর্তন হতেই পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রিটিশরা তাদের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের জন্য শোক প্রকাশের যে পোশাক পরেছিল, শত শত বছর ধরে সেই পোশাকই আইনজীবীরা ব্যবহার করে আসছেন। সেই শোক যেন আর শেষই হচ্ছে না। সময়ের প্রয়োজনে অবশ্যই এটা পরিবর্তন হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক থাকতে হবে কেন? আমেরিকায় দেখেছি, সেখানে কোর্টের মধ্যে সাধারণ মানুষ ও আইনজীবীরা একইভাবে অবস্থান করছেন। কারো কোনো আলাদা পোশাক বা নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নেই। কিন্তু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া ব্রিটেনের প্রথাগুলো আমরা বহন করে চলেছি। গরমের দিনে আমাদের দেশে এই কালো কোট পরে থাকা কি স্বাভাবিক বিষয়?’

ড. মিজানুর বলেন, একটি স্বাধীন দেশে আদালতের পোশাক ঔপনিবেশিক আমলের রীতি দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়।

তবে কালো কোট পরিধান করার প্রথার পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি মনে করেন এটি থাকা উচিত।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কালো কোট-সাদা শার্ট এবং গাউন পরিধানের মাধ্যমে আমরা আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করে থাকি। আদালতে বিচারপ্রার্থীসহ অনেকেই থাকেন, সেখানে আইনজীবীদের পৃথক করে চিনতে সুবিধা হয়।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘একসময় গরমের কারণে কালো কোট পরা নিয়ে অনেক আপত্তি ছিল। কিন্তু এখন তো প্রায় সব আদালতই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সে হিসাবে বলতে হয়, কালো কোট, টাই, গাউন আমাদের ঐতিহ্য। এটা আমাদের পৃথক পরিচয় বহন করে। এখন এসে এই পোশাক পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।’

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক জন আইনজীবীর পরিচয় কালো কোট, সাদা ব্যান্ড, সাদা শার্ট অথবা সাদা শাড়ি। সাদা পোশাক পঙ্কিলতাবিহীন, নিষ্কলুষতার পরিচায়ক। আর কালো কোট হচ্ছে মর্যাদা, সম্মান, জ্ঞান এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক। বিশ্বের অনেক দেশেই আইনজীবীরা এই পোশাক পরে আইনি পেশা পরিচালনা করছেন।’

তিনি বলেন, বার কাউন্সিল আইনে আইনজীবীদের ড্রেস কোডের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অন্যান্য অনেক পেশার মতো আইনজীবীদের জন্যও একটা নির্দিষ্ট ড্রেস কোড আছে।

সাজু আরও বলেন, ‘গরমের সময় আমাদের মধ্যে থেকে কালো কোট না পরার দাবি ওঠে। কিন্তু পেশার সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে আমরা এটি ব্যবহার করে আসছি। কালো কোট ব্যবহার করতে করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন দেখা যায়, এই কালো কোট না পরলে আইনজীবী হিসেবে চাঙ্গা ভাবই আসে না।’

তবে সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন করার সুযোগ থাকলে সেটিও করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া থেকে আইনে অধ্যয়ন করে আসা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষ আইনজীবীরা নেভি ব্লু বা কালো কোট এবং মেয়েরা নেভি ব্লু স্কার্ট বা কোট পরে থাকেন। তবে তারা কোনো গাউন পরেন না।

‘আমি মনে করি, আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সময়ের প্রয়োজনে কালো কোট পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিশেষ করে গরমের সময় নিম্ন আদালতগুলোতে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাতে কোট-টাইয়ের বিষয়ে নতুন কিছু চিন্তা করা উচিত।’

তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে এসি থাকলেও বিচারিক সব আদালতে এসি নেই। বিচারিক আদালতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের যে ভিড় থাকে, তাতে সেখানে কোট-টাই পরে টিকে থাকাই মুশকিল।

তবে শতাব্দীপ্রাচীন এ রীতি যতই অলঙ্ঘনীয় হোক না কেন, করোনা মহামারি এই ড্রেস কোডে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে গত বছর আইনজীবী ও বিচারকদের পোশাকে শিথিলতা আনা হয়। প্রথমে কালো কোট ও কালো গাউন বাদ দিয়ে শুধু সাদা শার্ট বা সাদা শাড়ি/সাদা সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড পরে বিচারকাজ পরিচালনা করার সুযোগ দিয়ে নোটিশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এরপর গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে নতুন আরেকটি নোটিশ দিয়ে কোট পরার বাধ্যতাবাধকতা ফিরিয়ে আনা হয়। তবে গাউনের ওপর শিথিলতা বহাল আছে।

কোথা থেকে এলো কালো কোট

১৬৮৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য আদালতে আইনজীবী ও বিচারকেরা কালো কোট ও গাউন পরা শুরু করেন।

এরপর থেকে এ শোকের পোশাক হয়ে যায় আইনজীবী ও বিচারকদের স্থায়ী পরিধেয়। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর ধরে এ পোশাকেই আইন পেশা পরিচালিত হয়ে আসছে ব্রিটেনে।

ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেও এ প্রথা চালু হয়, পরে যা বাহিত হয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতেও। তবে কানাডার মতো দেশে আইনজীবীরা লাল ও সাদা ইউনিফর্ম পরেন। ইউরোপের দেশগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবেই কালো বা নেভি ব্লু কোট এবং সাদা শার্ট পরা হয়।

বাংলাদেশের বিধিবিধানে একজন আইনজীবীকে কালো কোট ও সাদা রঙের গলাবন্ধনী পরার কথা বলা হয়েছে।

এ আইনগুলো হচ্ছে: দ্য সুপ্রিম কোর্ট অফ বাংলাদেশ (অ্যাপিলেট ডিভিশন) রুলস, দ্য সুপ্রিম কোর্ট অফ বাংলাদেশ (হাই কোর্ট ডিভিশন), সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস এবং দ্য ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস (প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর অফ সাবঅর্ডিনেট কোর্টস)।

আদালতপাড়া ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের পাশের দোকানগুলোতে সাদা শার্ট, কালো কোট, গাউনসহ আইনজীবীদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে। সেখানে মূল্যভেদে দেশি-বিদেশি ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার পর্যন্ত বিভিন্ন দামের গাউন রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর