বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রেমিকের ফোনের রেকর্ডে বেরিয়ে এল স্বামী হত্যার রহস্য

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২২:০১

গত ২৩ মে রাতে নাসির নিজ বাড়িতে মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করে স্বাভাবিকভাবেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন থেকে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথোপকথনের রেকর্ড পান তারা।

প্রায় ৯ মাস আগে বরগুনার নিজ বাড়িতে মারা যান স্কুলশিক্ষক নাসির হাওলাদার। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার স্ত্রী ফাতেমা মিতু জানিয়েছিলেন স্ট্রোকে মারা গেছেন।

সম্প্রতি রাজু মিয়া নামের এক যুবকের হারানো মোবাইল ফোনের অডিও রেকর্ডে জানা গেছে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। স্ত্রী মিতু তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রেমিক রাজুর সহায়তায় বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন।

নিহত নাসির বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকার গয়েজ উদ্দিনের ছেলে। গালবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন ৪৬ বছর বয়সী নাসির।

তাকে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার প্রেমিক রাজুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

২৪ বছর বয়সী মিতু বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা এলাকার মাহতাব মৃধার মেয়ে। তিনি বরগুনার থানাপাড়া এলাকায় বাবার ভাড়া বাসায় থাকতেন। আর ২০ বছর বয়সী রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।

গ্রেপ্তার রাজু মিয়া ও ফাতেমা মিতু

গত ২৩ মে রাতে নাসির নিজ বাড়িতে মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করে স্বাভাবিকভাবেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন থেকে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথোপকথনের রেকর্ড পান স্বজনরা। সেই রেকর্ড নিয়ে নাসিরের বড় ভাই জলিল বুধবার থানায় অভিযোগ জানানোর পর মিতু ও রাজুকে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার জলিলের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

নাসিরের ভাই জলিল নিউজবাংলাকে জানান, এক সপ্তাহ আগে রাজুর ফোন পান উপজেলার পোটকাখালী খেয়াঘাট এলাকার এক দোকানদার, তার নামও রাজু।

তার বন্ধু নাজমুল নিউজবাংলাকে জানান, রাজু ফোনটি পাওয়ার পর রাজু মিয়াকে (মিতুর প্রেমিক) দোকানে এসে ফোন নিয়ে যেতে বলেন। ফোন নিতে আসলে চা-নাস্তার টাকা চাইলে রাজু মিয়া তাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে চান।

রাজু মিয়া চা-নাস্তার জন্য এতো টাকা দিতে চাওয়ায় সন্দেহ হয় দোকানদার রাজুর। তিনি তখন ফোন ঘেঁটে ১৩টি অডিও রেকর্ড পান। সেই রেকর্ডগুলো কপি করে রেখে রাজু মিয়াকে ফোন দিয়ে দেন তিনি। পরে অডিও রেকর্ডগুলো শুনে নাসিরের ভাই জলিলকে জানান। এরই মধ্যে রাজু ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে রাজু মিয়াকে চাপ দেন হত্যার দায় স্বীকার করতে।

বিষয়টি মিতুর বাবা মাহতাব মৃধাকে জানালে তিনি বলেন, তার মেয়ে অনেক উচ্ছৃঙ্খল। মিতুকে পুলিশেও দিতে বলেন তিনি।

বুধবার নাসিরের ভাই জলিল অডিও রেকর্ডগুলো নিয়ে থানায় যান।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, নাসির তার বাবার বাড়িতেই পৃথক কক্ষে স্ত্রী মিতুকে নিয়ে থাকতেন। গত ২৩ মে রাতে নাসির মারা গেছেন বলে হঠাৎ চিৎকার শুরু করেন মিতু। পরিবারের সদস্যদের তিনি জানান, স্ট্রোক করে মারা গেছেন নাসির। তার কথায় বিশ্বাস করে স্বাভাবিক নিয়মেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।

ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর স্বজনরা জানতে পারেন, নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজু তাকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘নাসিরকে হত্যাসংক্রান্ত মিতু ও রাজুর কথোপকথনের কিছু রেকর্ড আমাদের কাছে আসার পর আমরা তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তারা নাসিরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, এ ঘটনায় নাসিরের বড় ভাই জলিল হাওলাদার বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় মিতু ও রাজুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মামলার বাদী জলিল বলেন, ‘৯ বছর আগে নাসির-মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মিতুর চলাফেলা ও আচরণ আপত্তিকর ছিল। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ঘটনার দিন মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের স্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পাই। তখন আমাদের কোনো কিছু সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি।’

জলিল জানান, নাসির-মিতু দম্পতির নুসরাত নামে সাত বছরের একটি মেয়ে ও নাঈম নামে চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ঘটনার পরপরই সন্তানদের নিয়ে মিতু সব আসবাবপত্রসহ বরগুনার থানাপাড়া এলাকায় বাবার বাসায় চলে যান।

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন মিতু ও রাজু। আদালতেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তারা। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর