টানা চতুর্থ দিনের মতো আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার বেশি মানুষকে দেয়া হলো করোনার টিকা।
গণটিকা শুরুর পঞ্চম দিনে সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ২ লাখের বেশি মানুষ।
রোববার প্রথম দিন ৩১ হাজার, দ্বিতীয় দিন ৪৬ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছিলেন। এরপর প্রতি দিনই আগের দিনের চেয়ে ৫০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি মানুষ টিকা নেন।
তৃতীয় দিনে টিকা নেন ১ লাখ ১০ হাজার ৮২ জন। চতুর্থ দিনে নেন ১ লাখ ৫৮ হাজারের কিছু বেশি মানুষ।
আর বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ৪৭টিসহ সারা দেশে ১ হাজার দুইটি কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪০ জন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টিকা নিতে সারা দেশে নিবন্ধন করেছেন রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। টিকা প্রয়োগের মতো নিবন্ধনের পরিমাণও বাড়ছে।
টিকা নিবন্ধনের নীতিমালায় আবার পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানিয়েছেন, টিকা কেন্দ্রে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার সুযোগ আর থাকছে না। এই ব্যবস্থা করার পর টিকাদানে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত হওয়ায় টিকা নিতে আগ্রহীদের আগের মতোই অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার যে আশঙ্কা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তার তেমন কোনো নমুনা দেখা যায়নি। এ পর্যন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৩৬৩ জনের।
প্রথম দিন ২১ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দ্বিতীয় দিন দেখা দেয় ৭১ জনের মধ্যে। তৃতীয় দিন ৯৪ জন এবং চতুর্থ দিন দেখা দেয় ৭০ জনের শরীরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে-এমন তথ্য এসেছে।’
প্রথম ধাপে প্রয়োগের জন্য সরকারের কাছে ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। এগুলো শেষ হয়ে গেলেও টিকার স্বল্পতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রতি মাসেই ৫০ লাখ করে টিকা আসবে। সেখান থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ।
এর বাইরে সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে তোলা জোট কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যাবে আরও পৌনে ৬ কোটি টিকা, যার প্রথম চালান আসবে চলতি মাসেই।
কোথায় কত টিকা
আগের চার দিনের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ দিনও জেলাওয়ারি সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৫৩ জন। আর ঝালকাঠিতে নিয়েছেন ৫১৭ জন।
ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৮৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৬৮ হাজার ৯০১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে টিকা নিয়েছে ৫১ হাজার ১৫৯ জন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৪ হাজার ৪৪৬ জন আর নারী ১৬ হাজার ৭১৩ জন।
এদের মধ্যে ছয় জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এদের তিন জন রাজধানী ঢাকার।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার ৮৬৯ জনকে। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ হাজার ৮৬৮ ও নারী ১৬ হাজার ১ জন।
এদের মধ্যে ৩০ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ২৩ হাজার ১৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ৭৩৬ ও নারী ৭ হাজার ৪৪৪ জন।
এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
খুলনা বিভাগে ২৩ হাজার ৪৭৯ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৩৮৪ জন পুরুষ, নারী ৭ হাজার ৯৫ জন।
এই বিভাগে পাঁচ জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৭ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৪৬৩, নারী ২ হাজার ৯৩৪ জন।
এই বিভাগে পাঁচ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৯ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ২৫৬, নারী ৫ হাজার ৪৮৮।
এদের মধ্যে সাত জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৯ হাজার ৩৩৭ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৪৩১ ও নারী ২ হাজার ২০৯ জন।
এই বিভাগে চার জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৯ হাজার ৩৮০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৫৬৮ ও নারী ৫ হাজার ৮১২ জন।
এই বিভাগে ৯ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান উদ্বোধন করার পর ২৬ জন ও পরদিন যে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়, তাদের মধ্যেও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।