শরীয়তপুরের নড়িয়ার কীর্তিনাশা নদীর ওপর দেড় বছর আগে নির্মাণ হয় ভোজেশ্বর-জপসা সেতু। নড়িয়ার ভোজেশ্বর বন্দরে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার মানুষের যাতায়াত সহজ করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় সেতু ও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ।
তবে সেতুর নির্মাণ শেষ হলেও এর দুপাশে বসেনি সংযোগ সড়ক। ফলে গ্রামের লোকজনকে নৌকা দিয়েই পার হতে হচ্ছে নদী।
সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি বলে জানায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এখন নতুন পদ্ধতিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে এলজিইডি। তাতে বেড়েছে প্রকল্পের খরচও।
নড়িয়ার এলজিইডি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে এই ৯৯ মিটার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু ও দুই প্রান্তের ৪৬৫ মিটার সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ পায় কামারজানি ব্রোজেন ও আনোয়ারা জেভি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী সাহাবউদ্দিন খান বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং ভূমি জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি।’
তিনি জানান, এই সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক ও অ্যাপ্রোচ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন ছিল বড় জমি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন এর জন্য জমি দিতে রাজি হয়নি। এ কারণে সে সময় থমকে যায় এই কাজ।
তখন ওই ঠিকাদারদের দিয়ে বরাদ্দের টাকায় ১০ মিটারের একটি বক্স কালভার্ট ও সেতুর দুই প্রান্তে ৮০ মিটার করে নদীর তীর প্রতিরক্ষার কাজ করিয়ে নেয় এলজিইডি।
২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন পদ্ধতিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে এলজিইডি। ২০২১ সালের জুনে এই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দেড় বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।
সংযোগ সড়ক না থাকায় অচল নতুন সেতুটি। এর প্রভাব পড়েছে নড়িয়া ও জাজিরার কৃষি, অর্থনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থায়। পণ্য পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় গ্রামের লোকজনকে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ, অপচয় হচ্ছে সময়ের।
জপসা ইউনিয়নের অটোরিকশাচালক আরিফ বেপারী বলেন, ‘ছোট ইট্টু পতের ভিতোর দিয়া চালাই। ওপার চালাইতে পারলে আমাগো রুজি বাইড়তো। দূরে দূরে যাইতে পারতাম। টাহার ইনকামড্যা বাইড়তো। সবার লিগ্যাই বালো অয়। অসুস্থ রুগী লইয়্যা অনেক ঘুইরা যাইতে হয়। রাস্তা খারাপ হেলিগ্যা গাড়ি নষ্ট অয়। বিরিজটা অইয়্যা গেলে আমাগো লিগ্যা বালো অয়।’
ভোজেশ্বরের গৃহিণী বন্যা বেগম বলেন, ‘বিরিজ দিয়া উপুকার তো পাইলাম না। ২০১৬ থিক্যা কাজ করতাছে; ২০২১ চলতাছে। অহনও নৌকা দিয়া পার হইতে হয়। আমার হেপার (ওই পার) বাড়ি থাকতেও এপার ভাড়া থাহি। রাত ৯টার পর কোনো নৌকা থাহে না। ডেলিভারি রোগী লইয়্যা কত সমস্যা। বিরিজ যদি কামেই না আহে তয় বানাইছে কী লিগ্যা।’
ভোজেশ্বর বন্দর থেকে জপসা ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন শামীম হোসেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ মিনিটের রাস্তার জইন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই জায়গা দিয়া পার অইতে অয়। প্রত্যেক দিনই দুই-একটা একসিডেন অয়।
‘আষাঢ়-শাওন মাসে তো যাওয়াই যায় না। এই কষ্টের লিগ্যা বানাইলো যেই বিরিজ হেইয়্যা তো হ্যামনেই পইড়া রইছে। কিচ্ছু কামে আইতাছে না। হুদাহুদি টাহাগুলানি লস।’
সংযোগ সড়ক নির্মাণে এত দেরির কারণ জানতে চাইলে প্রকৌশলী সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘এখন আর. ই. ওয়াল প্রযুক্তিতে সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এটা একটা নতুন প্রযুক্তি। অল্প জায়গায় সড়ক নির্মাণ সম্ভব। নতুন প্রযুক্তিতে কাজ করায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা বসে নেই। আশা করি দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করা যাবে।’