ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত নেহায়েত ছিনতাইয়ের কারণে হয়নি বলে মনে করছে পুলিশ।
সংগঠনের নেতারাও ভাবছেন এমনটিই।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিদ্ধান্তে আসতে তাড়াহুড়ো করতে চায় না। অনুসন্ধানে নিয়োজিত এক জন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, হেফাজতে বিভেদের জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে সংগঠনের নেতারাই তাকে বলছেন। এখন সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার এক দশক পর গত সেপ্টেম্বরে এর প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর হাটহাজারী মাদ্রাসায় তুলকালাম ঘটে যায়।
সেদিন শফীর কামরায় হামলা হয়, যার জেরে তিনি তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করেন।
দুই দিনের ঘটনাপ্রবাহের একপর্যায়ে শফী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে আনার পর তিনি মারা যান।
হেফাজতের একাংশের অভিযোগ, শফীকে চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়া হয়েছে এবং তাকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাও হয়েছে।
সংগঠনে এই বিভেদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় রহিম বক্স লেনে রিকশায় করে যাওয়ার পথে হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
এই ঘটনাটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। এতে স্পষ্ট যে, অস্ত্রধারী জসিম উদ্দিনকে লক্ষ্য করেই আক্রমণ চালিয়েছে।
ফুটেজে দেখা যায়, জসিম উদ্দিন রিকশায় করে যাওয়ার সময় অতর্কিতভাবে তার পিঠে ছুরি বসিয়ে টান দেন এক জন। মুহূর্তেই তিনি দৌড়ে চলে যান।
হামলাকারী এক জন হলেও তার সঙ্গে আরও দুই জনকে দৌড় দিতে দেখা যায়।
আঘাতের পর ৫৫ বছর বয়সী জসিমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই তার অপারেশন হয় বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহপ্রচার সম্পাদক ও মাওলানা জসিম উদ্দিনের জামাতা এহসানুল হক।
তিনি বলেন, ‘তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন। চিকিৎসকরা তাকে আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে। হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
হেফাজতের ঢাকা মহাগর রমনা জোনের (রমনা, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ) সেক্রেটারি আব্দুল গাফফার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। পেছন থেকে একজন এসে সরাসরি ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এলে পকেট বা অন্য কোথাও হাত দিত। তেমনটি দেখা যায়নি। আমাদের ধারণা, এই হত্যাচেষ্টা কোনো এক পক্ষের ইন্ধনে হয়েছে।’
জমিস উদ্দিন লালবাগ জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে আছেন।
হেফাজতে ইসলামে তাদের বিরোধী পক্ষ মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। এই কারণে মাওলানা জসিম উদ্দিনের ওপর হামলা হতে পারে বলে মনে করছেন হেফাজত ইসলাম ঢাকা মহানগরের সদস্য মাওলানা সানাউল্লাহ খান।
তিনি বলেন, ‘লালবাগ মাদ্রাসা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। আমরা মনে করি, এই বিভেদের কারণে কিছু একটা হতে পারে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে উনার সঙ্গে কারও আক্রোশ বা বিরোধ নেই। আমরা মনে করি, যারা সাংগঠনিকভাবে বিরোধিতা করছে, তারাই এ ঘটনার উসকানিদাতা, মদদদাতা, ইন্ধনদাতা।’
তবে কাদের সঙ্গে কী নিয়ে বিভেদ, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি সানাউল্লাহ খান।
পরিবার বা ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টায়ও মামলা করা হয়নি। তবে পুলিশ মাওলানা জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে। সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম আশরাফ উদ্দিন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেই বাদী হয়ে মামলা করবেন। তবে আমাদের তদন্ত চলছে।’