গণটিকা প্রয়োগের চতুর্থ দিনে টিকা নিলেন বাংলাদেশে পশ্চিমা দূতাবাসসহ বিভিন্ন দূতাবাসে কাজ করা কূটনীতিকরাও।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তারা টিকা নিতে আসেন।
তাদের সঙ্গে টিকা নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অবস্থানরত সব কূটনীতিক ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরতদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছি। আজ ৩০ জনের বেশি কূটনীতিক টিকা নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ১২ শ কূটনীতিক টিকা নেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল বিদেশি সংস্থার কাছে তালিকা চেয়েছি। তাদের কর্মীদের জন্যও টিকার ব্যবস্থা আছে। আমরা কূটনীতিকদের জন্য সপ্তাহে দুই-তিনটি দিন ঠিক করে দেব। তারা এখানে এসে টিকা নিতে পারবেন।’
শাহরিয়ার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক দেশই আমাদের লেভেলে যেতে পারেনি। আমরা এখন দিনে লাখের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছি।’
সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকরা। সংখ্যায় এরা ছিলেন সাত জন।
জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের হাইকমিশনারও দেন টিকা।
ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডিন আর্চবিশপ জর্জ কোশারি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে সবাই টিকা নিন, যাতে মহামারি ক্ষীণ হয়ে আসে এবং দেশ অগ্রসর হতে পারে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক বলেন, ‘এমন উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ, কোনো ধরনের লাইন ছাড়া টিকা নেওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা টিকাদানের ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারি এবং এটা মানুষের মধ্যে আস্থা আনবে।’
ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, এটা তার প্রতিফলন।
‘আমাদের বন্ধুত্ব কতটা কাছের তা প্রদর্শনের লক্ষ্যেই আমাদের দিক থেকে বাংলাদেশকে টিকাদানের ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ করোনার টিকা এনেছে ভারত থেকে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
এখান থেকে বাংলাদেশ ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনেছে। পাশাপাশি ভারত সরকার উপহার দিয়েছে ২০ লাখ টিকা।
বিশ্বের বহু দেশই সিরাম থেকে এই মুহূর্তে টিকা পাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ আগেই চুক্তি করার সুফল পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, সরকার আরও টিকা পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে উঠা জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমুনাইজেশনের (গ্যাভি) আওতায় কোভ্যাক্স থেকে খুব বড় সংখ্যায় টিকা পাবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে ১ হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। চার দিনে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে বুধবার দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষকে।
এখন পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছে সাড়ে ৯ লাখের কিছু বেশি মানুষ।
সরকার হাতে ৭০ লাখ টিকা নিয়ে প্রয়োগ শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রতি মাসে ভারত থেকে আসবে ৫০ লাখ করে।
কোভেক্স থেকে পাওয়া যাবে আরও পৌনে ৭ কোটি টিকা।