করোনার টিকাকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। গণটিকা শুরুর পর পরপর চার দিন প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মানুষ নিয়েছে টিকা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ৪৭টিসহ সারা দেশে ১ হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা নিয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন। যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার বেশি।
রোববার গণটিকার প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও দ্বিতীয় দিন নিয়েছিল ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ। মঙ্গলবার টিকা নেয় ১ লাখ ১০ হাজার ৮২ জন।
চার দিনে টিকা নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টিকা নিতে সারা দেশে নিবন্ধন করেছেন ৯ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮ জন। টিকা প্রয়োগের মতো নিবন্ধনের পরিমাণও বাড়ছে।
এই টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার যে আশঙ্কা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তার তেমন কোনো নমুনা দেখা যায়নি। এ পর্যন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ২৭৭ হাজার জনের।
প্রথম দিন ২১ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দ্বিতীয় দিন দেখা দেয় ৭১ জনের মধ্যে। তৃতীয় দিন ৯৪ জন এবং চতুর্থ দিন দেখা দিয়েছে ৭০ জনের শরীরে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৭৭ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে অপেক্ষমাণ নারীরা
শতকরা হিসাবে মঙ্গলবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.০৯২ শতাংশ, যা যে কোনো টিকার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চিত্র। আর তিন দিন মিলিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.১১ শতাংশ।
বুধবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমানের বলেন, কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে-এমন তথ্য এসেছে।
চতুর্থ দিনে টিকা নিয়েছেন দেশে টিকা আনতে মধ্যস্থতা করা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৩০ বিদেশি কূটনীতিক।
আগের তিন দিনের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ দিনও জেলাওয়ারি সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে।
ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৭৬৬ জন। আর ঝালকাঠিতে নিয়েছেন ৩৮৯ জন।
টিকা বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৬৩ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৩০ হাজার ৭৮০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ২৮ হাজার ২৯২ জন আর নারী ১২ হাজার ৬১৫ জন।
এদের মধ্যে সাত জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এদের দুই জন রাজধানী ঢাকার।
টিকা নিতে আগ্রহীরা নিবন্ধন করছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৫৮ জনকে। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৪৪৭ ও নারী ১০ হাজার ৯৭১ জন।
এদের মধ্যে ২৬ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ২৪ জনের।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৭ হাজার ৯৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৬৮৭ ও নারী ৫ হাজার ২৮৪ জন।
এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
খুলনা বিভাগে ১৭ হাজার ১১৫ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৮০ জন পুরুষ, নারী ৪ হাজার ৮৩৫ জন।
এই বিভাগে পাঁচ জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৬ হাজার ১৪৭ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৪৭৯, নারী ১ হাজার ৬৬৮ জন।
এই বিভাগে পাঁচ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৮০ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৭২৫, নারী ৫ হাজার ৩৫৫।
এদের মধ্যে কারো শারীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৭ হাজার ৫৪৯ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৩৪৭ ও নারী ২ হাজার ২০২ জন।
এই বিভাগে চার জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৪ হাজার ২২৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৩৪৯ ও নারী ৩ হাজার ৮৩০ জন।
এই বিভাগে ১৫ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান উদ্বোধন করার পর ২৬ জন ও পরদিন যে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়, তাদের মধ্যেও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ভারত থেকে এই টিকা আসার পর থেকেই বিএনপি এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, এই টিকা দিলে মানুষ মারা যাবে। তিনি এমনও বলেন, সরকার টিকা দিয়ে বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন টিকা নিয়েছেন। আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি টিকা নেবে না এ কথা কখনও বলেনি।