বাংলাদেশকে নিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তার ভিত্তিতে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটিকে অপপ্রচার হিসেবে বর্ণনা করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের ১০ দিন পর করা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনে প্রচারিত অভিযোগসমূহের অনেক বিষয় নিঃসন্দেহে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। দেশে ও দেশের বাইরে একাধিক দেশে এই সব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংবাদের কারণে উল্লেখিত অভিযোগসমূহ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধে রূপ লাভ করেছে।
তিনি বলেন, সাতটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘকে এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিজস্ব পদ্ধতিতে যে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে, এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছে এবং জাতিসংঘকে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে আশু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গর্ব উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় সংকটে অকাতরে কাজ করে যাওয়া দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বদা জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্নীতি বা নৈতিকতাবিবর্জিত কর্মের কারণে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল এই মহান প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ওই প্রতিবেদনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি প্রতিবাদলিপিতে অভিযোগসমূহের সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়া হয়নি বলেও মনে করেন সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ। বলেন, সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে রাজনৈতিক বুলির আড়ালে অভিযোগসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেও অপরাধ আড়ালের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে সরকারপ্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রমাণসহ নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানির কথা ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে কিন্তু জাতিসংঘ পরিষ্কার ভাষায় তা নাকচ করে দিয়েছে।
এখন জনমনে প্রশ্ন, অবৈধভাবে আমদানিকৃত ওইসব আড়িপাতা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের সরঞ্জামাদি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে?
তিনি বলেন, জনশ্রুতি আছে যে, এ সকল সরঞ্জাম বিরোধী জনমতকে দমন করার কাজে ব্যবহার করে নাগরিক অধিকার তথা মানবাধিকারের মত সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে চলছে সরকার, যা গণতন্ত্র হত্যা তথা সংবিধান লঙ্ঘনজনিত অপরাধের শামিল।
সেনাবাহিনীকে জাতীয় ঐক্যের গর্বিত প্রতীক উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা দলমত-নির্বিশেষে আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।