বাংলাদেশে করোনার টিকা আনতে মধ্যস্থতা করা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান মনে করেন, কেউ কেউ তার উদ্যোগের সমালোচনা করলেও সিংগভাগই প্রশংসা করছে।
গণটিকার চতুর্থ দিন বুধবার দুপুর পৌনে একটার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এসে টিকা নেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান। ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে থাকার পর হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সালমান বলেন, ‘টিকা নিয়ে শুরুতে অনেক সমালোচনা ছিল, অনেকের মধ্যে সন্দেহ ছিল, এখন সেটা কেটে গেছে। আমাকেও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে অনেক সমালোচনা করার চেষ্টা করেছিল।
‘যারা সমালোচনা করতেছে তারা এমনিতেও করবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ম্যাক্সিমাম মানুষ আমরা যে উদ্যোগটা নিয়েছিলাম সবাই তার প্রশংসা করতেছে। এবং সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই টিকা আনার আগে তিনি কিন্তু ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে টিকা এনেছেন।’
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের টিকা কেনার ক্ষেত্রে বেক্সিমকো ফার্মা রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ টিকা আনতে যোগাযোগ করেছিল সিরামের সঙ্গে। পরে তারাই সরকারকে প্রস্তাব দেয় টিকা আনতে রাজি কি না।
বাংলাদেশে সিরামের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো টিকাপ্রতি এক ডলার করে পাবে সরকারের কাছ থেকে। তবে এর বিনিময়ে তাদের নানা কাজ করতে হবে। টিকা আসার পরে সেগুলো গুদামজাত করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, জেলায় জেলায় পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনাসহ অন্য কোনো কারণে ক্ষতি হলে সেটা পূরণ করে দিতে হবে বেক্সিমকো ফার্মাকে।
বেক্সিমকোর পরামর্শেই সরকার সিরামের সঙ্গে চুক্তিতে একটি অভিনব ধারা সংযোজন করেছে। ভারত সরকার যদি চার ডলারের নিচে টিকা কেনে, তাহলে বাংলাদেশও একই দামে পাবে এই টিকা। তবে ভারত যদি চার ডলারের বেশিতে কেনে, তাহলে বাংলাদেশ চার ডলার দাম দেবে প্রতি টিকার জন্য।
এই টিকা আসার আগে ও পরে বিশেষ করে বিএনপি নানা নেতিবাচক কথা বলেছে। টিকা নিয়ে মানুষ মারা যাবে- দলটির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর সামাজিক মাধ্যমে দলটির সমর্থকরাও টিকাবিরোধী ব্যাপক বক্তব্য দিয়েছে। তবে টিকাদানে আগ্রহ যে বাড়ছে, সেটা স্পষ্ট। গণটিকা উদ্বোধনের প্রথম দিনে ৩১ হাজার, দ্বিতীয় দিন ৪৬ হাজার, তৃতীয় দিন ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন।
সালমান এফ রহমান সবাইকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে অপপ্রচার রোধের পাশাপাশি টিকা নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সবার জন্য করোনা টিকা নিশ্চিতে, টিকা নেয়ার বয়সসীমা কমতে পারে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। হয়ত কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কারা প্রথমে করোনার টিকা পাবে-সে বিষয়ে সরকার যে অগ্রাধিকার তালিকা করেছিল, তাতে স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের অত্যাবশ্যকীয় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীর বাইরে বলা হয়েছিল ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীরাই প্রাথমিকভাবে টিকা পাবেন। তবে পরে ৫৫ বছরের বয়সসীমা কমিয়ে ৪০ করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা এমনি এমনি আসেনি। করোনার শুরুতে দু্ই হাজার ডাক্তার-নার্স নিয়োগসহ তার দূরদর্শিতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সবার সহযোগিতা রয়েছে।