জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যায় আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বুধবার দুপুর ১২টার পর এ রায় দেন। এ সময় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচিত এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় নেয়া হয় করা নিরাপত্তা।
রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে কিছুক্ষণ বসে থাকেন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মইনুল হাসান শামীম, আ. সবুর, খাইরুল ইসলাম, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আব্দুল্লাহ, সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তারা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
তাদের মধ্যে জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেন পলাতক।
মামলার ছয় আসামিকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে আদালতপাড়ার একটি গারদখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টার দিকে তাদের আদালতে তোলা হয়।
এর আগে রোববার একই আদালতের বিচারক মজিবুর রহমান রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।
দীপন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন গোলাম ছারোয়ার খান। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন এম নুরুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ অফিসে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিনই তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
রায়ে বলা হয়, জিহাদের অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসাল আল ইসলাম বা আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করা এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস ও নস্যাৎ করা।
আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কণ্ঠ স্তব্দ করে দেয়া এবং মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বা হুমকির মুখে ফেলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন।
বিচারক বলেন, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর দীপন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সেদিন মামলার বাদী ও দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান ও জব্দ তালিকার সাক্ষী আজিজ সুপার মার্কেট কো-অপারেটিভ মালিক সমিতির সহকারী আনোয়ার হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক থাকায় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। ২০২০ সালের ১৬ মে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হয়।