বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোদির সফরে চুক্তির আশা তিস্তাপারের মানুষের

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২০:১৪

তিস্তা নদী মোট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত। কিন্তু অভিন্ন এই নদীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন, দুই পক্ষের সমঝোতা এমনকি মানবিক আবেদন উপেক্ষা করে উজান থেকে এক তরফা পানি প্রত্যাহার করেছে ভারত।

তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৪ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু বর্তমানে পানি আছে দেড় থেকে ২ হাজার কিউসেক। পানির অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের মানুষের জীবনযাত্রা।

অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প-তিস্তা ব্যারেজ। ধ্বংসের মুখে পরিবেশ। নদীটি বাঁচাতে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতকে অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি দ্রুত সই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের সূচি চূড়ান্ত হওয়ায় খুশি রংপুর বিভাগের চার জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তাপারের কোটি মানুষ। আশার আলো দেখছেন নদী বিশেষজ্ঞরাও।

নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, তিস্তা নিলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ১৭৮৭ সালে একটি বড় বন্যায় নদীটি গতিপথ পাল্টে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মেশে। তিস্তা নদী মোট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত।

কিন্তু অভিন্ন এই নদীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন, দুই পক্ষের সমঝোতা এমনকি মানবিক আবেদন উপেক্ষা করে উজান থেকে এক তরফা পানি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী আইনের সুস্পষ্ট লংঘন করছে ভারত।

ড. তুহিন আরও বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।কিন্তু এ সিদ্ধান্তে তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ, কোন কোন জায়গায় পানি ভাগাভাগি হবে, এ রকম কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

পানির অভাবে মরতে বসেছে তিস্তা

অন্যদিকে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ভারত সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে উল্টো তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি, এই দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না বলে খোঁড়া যুক্তি দেখায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দেন। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বর্তমানে দেড় থেকে দুই হাজার কিউসেক পানি আছে নদীতে আছে। অথচ তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৪ হাজার কিউসেক পানি। সেচ প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহ মাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তায় স্বাভাবিক প্রবাহ মাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১০ হাজার কিউসেক। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের পর থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে উল্টোচিত্র দেখা যায়। তখন ভারত পানি ছেড়ে দেয়। এ কারণে ব্যারেজের ৪৪টি গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে দিয়েও পানি সরানো সম্ভব হয় না। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষক ও কৃষি।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. মো. মোরশেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পেলে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষাবাদে আসবে নতুন চাঞ্চল্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বিরূপ প্রভাব থেকে। তিস্তা ফিরে পাবে তার পুরোনো দিনের খরস্রোতা রূপ। তিস্তাপারের মানুষরা হবে স্বাবলম্বী।

তিস্তাপারের বাসিন্দা আশরাফ আলী বলেন, ‘এই নদীর কত উপ (রূপ) বাহে। নদীর ধারোত আছি ৪২ বছর। একবার এপাকে, একবার ওপাকে। এমন করি করি এতদিন কাটানো। নদীত মাছ ধরি সংসার চালালোং। এলা নদীত পানি নাই। এক সময় সারা বছর পানি আছিল। এলা সুরু খাল হইচে। হাটি নদী পার হই হামরা। মাছ তো নাই। পুরে নদীত এলা আবাদ হয়।’

জহুরুল ইসলাম নামে এক জেলে বলেন, ‘এক সময় নদীর মাছ ধরে শুঁটকি বানায় বাজারোত বিক্রি করি সংসার চালাইছি। এলা খাওয়ার মাছ পাওয়া যায় না। হামরা যে কী কষ্ট করি থাকি সেডা হামরা জানি। হামারগুলের খোঁজ তো কাইও নেয় না। শুনছি ভারত নাকি পানি দিবে, পানি দিলে হামরা আবার মাছ ধরমের পামো।’

গংগাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় ধান, পাট, আলুসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে সেচ দিতে গুনতে হয়েছে বাড়তি খরচ। যে কৃষকরা চরে ফসল ফলায়, তাদের কষ্টে চোখে পানি আসে। তারা কলসিতে করে নদী থেকে পানি এনে এনে তিস্তার চরে ফসল ফলাচ্ছে। যাদের সামর্থ আছে তারা হয়তো শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি দিচ্ছে। কিন্তু এতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। তিস্তায় পানি পেলে এখানকার কৃষি ও কৃষক উপকৃত হবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন তিস্তা চুক্তির বিষয়টি ২০১১ সালেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন সাক্ষরের অপেক্ষায়। তিস্তা অভিন্ন নদী। সেখানে অভিন্ন অধিকার আমাদের। যেভাবেই হোক মোদির এই সফরে আমাদের সরকার তিস্তার বিষয়ে এজেন্ডা আনবে এবং বাস্তবায়ন করবে এটাই প্রত্যাশা।’

এ বিভাগের আরো খবর