রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ভাড়া বাসায় নিজের ১৩ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে কামাল হোসেন নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদাণ্ড দিয়েছে আদালত।
এ ছাড়া তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় দেন।
রায় পড়ার শুরুতে বিচারক বলেন, ‘আমি যে বিষয়ে আজ রায় দিতে বসেছি, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম ঘটনা। একজন পিতার কাছে তার মেয়ে যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে সে কোথায় যাবে? তাই এটি এমন একটি ঘটনা একটি মেয়ের জন্য, যে সে সমাজের কারো কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এমনকি তার স্বামীর কাছে গিয়েও দাঁড়াতে পারবে না।
‘যদিও মেয়েটি তার বাবাকে ক্ষমা করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র এই জঘন্যতম অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। তাই তার যাবজ্জীবন দণ্ডের আদেশ দিচ্ছি। আসামি কামাল হোসেনের বয়স কম তাই তাকে আমি আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিলাম না।’
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) বলেন, এ রায় নজির হয়ে থাকবে।
রায় ঘোষণার প্রাক্কালে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহাবুবুল হাসান আপেল এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ঘটনার ৮-৯ বছর আগে মেয়েটির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর সে তার দাদীর কাছে থাকত। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কামাল হোসেন লিপি বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন।
২০১৯ সালের এপ্রিলে কামাল হোসেন মেয়েকে নিয়ে রূপনগর আবাসিক এলাকার বস্তির বাসায় যান। এ নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। পরে একই বছরের ২ মে মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড্ডার আব্দুল্লাহবাগে বাসা ভাড়া নেন। এরপর ৪ ও ৫ মে কামাল হোসেন তাকে ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনায় মেয়েটি বাদী হয়ে তার বাবার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় ধর্ষণ মামলা করে। মামলার পর কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন কামাল। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলাটি তদন্ত করে বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-ইমরান আহম্মেদ কামাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২০ সালের ১২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
গত ৯ ডিসেম্বর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ১০ সাক্ষীর মধ্যে ছয়জন সাক্ষ্য দেন। গত ১৯ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৮ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছিল আদালত। পরে রায়ের তারিখ এক দফা পিছিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়।