বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’র প্রতিবাদ ও প্রশাসনের ‘অদ্ভুত’ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে চলছে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মৌন মিছিল। এতে অশান্ত হয়ে উঠছে উত্তরের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ।
গেল ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর লিয়াজোঁ অফিসে সিন্ডিকেটের ৭৫তম সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাংলো, অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ, স্লোগান ও মৌন মিছিল করা যাবে না। তবে এর পর পরই এই নির্দেশনা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’-এর সদস্যরা ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন।
মিছিলটি শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
জানতে চাইলে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্যের লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ডুবতে বসেছে। এর প্রতিবাদে আমরা বহুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। উপাচার্য আইন মানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি-প্রবিধি মানেন না। সম্প্রতি তিনি একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। তাতে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতেও অনুমতি লাগবে।
‘মূলত ওনার (ভিসির) অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন আন্দোলন করতে না পারেন, সেজন্য অদ্ভুত নির্দেশনা জারি করেছেন। আমরা ওই নির্দেশনা মানি না। মানতে পারি না। তাই তার নির্দেশনা ভেঙে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছি। এরপরও যদি ওই নির্দেশনা বহাল রাখা হয়, আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে আসেন না। তার বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ করা যাবে না, এই কথার মানে তো আমরা বুঝতে পারছি না। এক জন উপাচার্য যদি স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কথা বলাটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।’
ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটও।
ছাত্রজোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিনা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থি। এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাক্স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ।
‘সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা আশা করব, উপাচার্য দ্রুত তার আদেশ প্রত্যাহার করে নেবেন।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, উপ-উপাচার্য শরিফা সালোয়া ডিনাকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু কলগুলো রিসিভ হয়নি।